প্রতীকী ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিদান— পড়ুয়া টানতে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাধ্যমিক স্কুলগুলি বাংলার পাশপাশি ইংরেজি মাধ্যমও চালুর ব্যবস্থা করুক। শুক্রবার হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে এমনই ইচ্ছার কথা জানান তিনি। কিন্তু তিনি চাইলেও বাস্তবে তা আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই।
ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়, জেলার শহরাঞ্চলে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বহু স্কুল ছাত্রশূন্য হয়ে যাচ্ছে। পড়ুয়ারা ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুলে চলে যাচ্ছে। এই তথ্য জেনেই মুখ্যমন্ত্রী স্কুলে একাধিক মাধ্যম চালুর প্রস্তাব দেন। বৈঠকে উপস্থিত স্কুল-শিক্ষাসচিব দুষ্মন্ত নারিয়ালকে তিনি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতেও বলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলা-ইংরেজি- হিন্দি— তিনি চান, এই তিন ভাষাতেই পড়াশোনা হোক স্কুলে।
মুখ্যমন্ত্রীর নতুন ইচ্ছার বাধা হিসেবে শিক্ষক-সঙ্কটের কথাই বলছেন প্রশাসন থেকে শিক্ষক সমাজের একাংশ। তাঁদের মতে, এখনই কয়েক হাজার শিক্ষক পদ খালি। এই প্রেক্ষাপটে ইংরেজি মাধ্যমের ক্লাস চালু করলে শিক্ষক-সমস্যা আরও তীব্র হবে।
এর আগে পুরোপুরি সরকারি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যম চালুর পরিকল্পনা হয়েছিল ২০১৩ সালে। ঠিক হয়েছিল, প্রথম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যম থাকবে। চার বছর আগের সেই পরিকল্পনা এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান সরকারি স্কুল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু। তিনি বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষক পদের অনুমোদন দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত নিয়োগ হয়নি। তাই একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ইংরেজি মাধ্যম চালু হলেও প্রথম থেকে দশম শ্রেণিতে তা চালু করা যায়নি।’’ শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইংরেজি মাধ্যমের জন্য শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বললে করে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই নিয়োগ আদৌ হবে তো?’’
শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা বাস্তবসম্মত নয়। তিনি জানান, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বাংলা মাধ্যম স্কুলে এখন ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ খালি। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে পঠনপাঠনের মানোন্নয়নের পরিকল্পনা করার চেয়ে প্রশাসনিক কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। এর পরে ইংরেজি মাধ্যম কী ভাবে খোলা যাবে? বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলও বলেন, ‘‘শিক্ষকের অভাবই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’’
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ছিলাম। উনি যা চাইছেন, তাকে স্বাগত। শিক্ষকের অভাব থাকতেই পারে। তবে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চই সে রকম পরিকল্পনা করেই তাঁর ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করবেন।’’