প্রশাসনের মেদ ঝরিয়ে সংস্কারের পথে মমতা

ন্যূনতম সরকার, সর্বাধিক প্রশাসন— প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন প্রায় আড়াই বছর। তাঁর সরকারের বহর কমেনি। প্রশাসনকে মেদহীন করে সরকারের আয়তন কমাতে এ বার সংস্কারের পথে হাঁটছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই অন্তত দশটি দফতর গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত পাকা। দিন দশেকের মধ্যেই সরকার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে। তবে মন্ত্রীদের জন্য আশার কথা— দফতরের সংখ্যা কমলেও আপাতত কারও ‘চাকরি’ হয়তো যাচ্ছে না।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৮
Share:

ন্যূনতম সরকার, সর্বাধিক প্রশাসন— প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন প্রায় আড়াই বছর। তাঁর সরকারের বহর কমেনি। প্রশাসনকে মেদহীন করে সরকারের আয়তন কমাতে এ বার সংস্কারের পথে হাঁটছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই অন্তত দশটি দফতর গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত পাকা। দিন দশেকের মধ্যেই সরকার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে। তবে মন্ত্রীদের জন্য আশার কথা— দফতরের সংখ্যা কমলেও আপাতত কারও ‘চাকরি’ হয়তো যাচ্ছে না।

Advertisement

নবান্ন সূত্রে বলা হচ্ছে— রাজ্য প্রশাসনের কম গুরুত্বের অংশ ছেঁটে খরচ কমানোর পাশাপাশি সরকারি কাজে সমন্বয় ও গতি আনতেই মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ। নবান্নের এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার কথায়, ‘‘প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছে বহু কাল। কেউই করে দেখাননি। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কাজ করে দেখাচ্ছেন।’’ সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সচিবের রসিকতা, ‘‘অকাজের এবং গুরুত্বহীন দফতরগুলিকে হয় তুলে দেওয়া হবে, না হলে অন্য দফতরের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। সরকারের অন্দরেই এ বার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক।’’

কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত?

Advertisement

নবান্নের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, আগামী বছর থেকে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি টালমাটাল হতে চলেছে। বছরে গড়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা কেবল ঋণ শোধ করতেই চলে যাবে। তার উপরে আছে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ছেঁটে ফেলার চাপ। আগামী দু’এক বছরের মধ্যেই পুরোদমে চালু হয়ে যাবে পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি)। এ সবের প্রভাবে রাজ্যের কোষাগারে বিপুল চাপ পড়তে চলেছে। সেই কারণে রাজ্যকে যেমন নিজেদের উদ্যোগে রাজস্ব সংগ্রহের নতুন নতুন রাস্তা খুঁজতে হবে, তেমনই খরচের বহরও কমাতে হবে। ব্যয়সঙ্কোচের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবেই সরকার চালানোর খরচে রাশ টানতে চান মুখ্যমন্ত্রী।

প্রশাসনের অন্দরের খবর, দফতর পুনর্বিন্যাসের আঁচ রাজ্য সরকারি কর্মীদের গায়ে লাগবে না। তবে কোনও দফতরে বাড়তি কর্মী রয়েছেন দেখা গেলে তাঁদের অন্য দফতরে বদলি করা হতে পারে। এতে আগামী কয়েক বছর ওই সব দফতরে নতুন কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন কমে যাবে। পরোক্ষে এতেও আর্থিক সাশ্রয়
হবে সরকারের।

রাজ্যের এক বরিষ্ঠ সচিব জানান, দফতরের সংখ্যা কমানোর প্রস্তাবটি মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। শোনামাত্র তাতে সায় দেন মমতা। নির্দেশ দেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তাব পেশ করুন। আমি এটা করব।’

এখন আলাদা

• বায়োটেকনোলজি, বি়জ্ঞান প্রযুক্তি,কারিগরি শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা

•জনশিক্ষা প্রসার, গ্রন্থাগার, মাদ্রাসা শিক্ষা, স্কুলশিক্ষা

• বন, পরিবেশ

কৃষি

অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন

এর মধ্যে দশটি দফতর বাছবেন মুখ্যমন্ত্রী

এর পরে অন্য সচিবদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রাথমিক প্রস্তাব তৈরি করছেন মুখ্যসচিব। এই প্রস্তাব তৈরির ব্যাপারে মুখ্যসচিবকে সাহায্য করছেন স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে, অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, কৃষিসচিব সঞ্জীব চোপড়া, কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার সচিব মনোজ অগ্রবাল এবং ভূমিসচিব মনোজ পন্থ। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রীই।

সচিবদের কোর গ্রুপের এক সদস্য জানান, রাজ্যে এখন ৬০টি দফতর। ৪২ জন মন্ত্রী রয়েছেন। সংবিধানের শর্ত মেনে প্রয়োজনে আরও দু’জনকে মন্ত্রিসভায় নিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং প্রধান সচিব পর্যায়ের অফিসার আছেন ৪৪টি দফতরে। বাকি দফতর চলছে সচিব পর্যায়ের অফিসারদের দিয়ে। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে দফতরের মূল দায়িত্ব থাকে প্রধান সচিবদের। এ রাজ্যে দফতরের সংখ্যার নিরিখে যথেষ্ট প্রধান সচিব নেই। হিসেব করে দেখা গিয়েছে ১০টি দফতর কমালেই প্রতিটি দফতরে প্রধান সচিব দেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ আমলারাই দফতর চালাবেন।

দফতর সংখ্যা কমানোর জন্য বেশ কিছু কারণ নির্দিষ্ট করেছে সচিবদের কোর গ্রুপ। এর মধ্যে সবার আগে রয়েছে প্রশাসনিক খরচ কমানো। দফতর কমে গেলে খরচও কমবে। ১০টি দফতর কমলে বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে। তার কারণ যে কোনও দফতর পরিচালনার জন্য বছরে অন্তত ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। সচিব ও কর্মী নিয়োগ, তাঁদের বেতন, মন্ত্রী ও সচিবদের গাড়ি এবং দফতরের বাজেট তৈরির জন্যই এই টাকা লেগে যায়।

সংস্কারের পরিকল্পনাকারীরা বলছেন, একই ধরনের কাজের দফতরগুলি মিলিয়ে দিলে প্রশাসনিক সমন্বয় ভাল হয়, কাজেও গতি আসে। এক সচিবের প্রশ্ন, ‘‘কেন বায়োটেকনোলজি আর বি়জ্ঞান-প্রযুক্তি আলাদা দফতর থাকবে, আবার কেনই বা কারিগরি শিক্ষা উচ্চশিক্ষার সঙ্গে মিশে যাবে না?’’

নবান্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, এক ধরনের দফতরগুলি মিশে গেলে সাধারণ মানুষেরও সুবিধা হবে। মহাকরণে এক সঙ্গে অনেক সরকারি দফতর ছিল। সচিবালয় নবান্নে উঠে যাওয়ার পরে অনেক দফতরই বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে। এতে মানুষের সমস্যা হচ্ছে। তাই একই ধরনের দফতরগুলিকে একই ছাদের তলায় নিয়ে আসার ভাবনাও রয়েছে সরকারের। ভাড়া বাড়ির বদলে সব দফতরকে সরকারি ভবনে জায়গা দেওয়ারও চেষ্টা হচ্ছে। এতে বাড়ি ভাড়ার বহু টাকা বাঁচবে সরকারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন