এ বার পরিবর্তনের স্লোগান নেই। সিপিএম-বিরোধিতার জিগিরও নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২০১৬ সালে ইতিবাচক ভোটের পরীক্ষা দিতে হবে। তাই এ বছরের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ‘মা-মাটি-মানুষের’ সরকারের জনমোহিনী কর্মসূচিকেই হাতিয়ার করলেন তৃণমূল নেত্রী।
ভোটার-মন টানতে মঙ্গলবার ‘শহিদ দিবসে’র সভা থেকে মমতা বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তিনিই রাজ্যের গরিব ও সংখ্যালঘুদের প্রকৃত ‘বন্ধু’। এই বার্তা দিতে তাঁর অস্ত্র সস্তার চাল এবং সংখ্যালঘু ও তফসিলি-সহ পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নে কিছু প্রকল্প।
জঙ্গলমহলের ৩ কোটি ২০ লক্ষ মানুষকে কিলোগ্রাম প্রতি দু’টাকা দরে চাল দিচ্ছে মমতার সরকার। সেই কথা উল্লেখ করেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা করেছেন, আরও ৩ কোটি মানুষকে তিন টাকা কিলো দরে চাল দেওয়া হবে শীঘ্রই। আগামী ১ অগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর— এই দু’মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে এপিএল এবং বিপিএল তালিকাভুক্ত সকলকে ওই সুবিধার জন্য আবেদন করতে হবে। কেন্দ্রের ‘সোশ্যাল ইকনমিক কাস্ট সার্ভে’ অনুযায়ী এই সুবিধা-প্রাপকদের তালিকা তৈরি হবে। প্রশাসনের কাজে সহযোগিতার জন্য দলকে নেমে পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। দলের কর্মীদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, ‘‘তালিকা তৈরির সময় দেখতে হবে, বিপিএল তালিকাভুক্ত কোনও মানুষ যেন সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন।’’ বিপিএল তালিকাভুক্তদের সবুজ এবং এপিএল তালিকাভুক্তদের সাদা রঙের আবেদনপত্র দেওয়া হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে রাজ্যের ৯ কোটি মানুষের মধ্যে ৬ কোটিই সস্তার চালের আওতায় আসবেন। আর বাকি ৩ কোটিকেও কোনও প্রকল্পের আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে বলে তিনি ঘোষণা করেছেন।
সাত বছর আগের পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে সব ক’টি ভোটেই মমতার সাফল্যের পুঁজি ছিল সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক। কিন্তু সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের একাংশই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি পূরণ না করার অভিযোগ তুলেছেন। সেই প্রেক্ষিতেই বাড়তি সতর্ক মমতা এ দিন সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্পের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। রাজ্যে ৩৫ লক্ষ ইমাম এবং মোয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ফের উল্লেখ করেছেন। কাজী নজরুল ইসলামের নামে বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর তৈরির পাশাপাশি কবি ইকবালের নামে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চেয়ার, নতুন হজ হাউস তৈরির কথাও টেনে এনেছেন তিনি। সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে অনলাইন আবেদনের সুবিধার কথা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘যাঁরা অনলাইনে স্বচ্ছন্দ নন, তাঁরা জেলার সংখ্যালঘু ভবনে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন।’’ এমনকী, ১৭% ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি)-র সংরক্ষণের মধ্যে সংখ্যালঘুদের জন্য এ রাজ্যে যে ৯৭% সংরক্ষণ করা হয়েছে, তা জানিয়ে মমতার দাবি, ‘‘এই সাফল্য পৃথিবীতে নজিরবিহীন!’’
রাজ্যে শিল্পায়ন বা কর্মসংস্থানে খরার অভিযোগে বিরোধীরা নিয়মিতই সরব। বিরোধীদের সেই অভিযোগ উড়িয়ে এ দিন মমতার দাবি, রাজ্যে ক্ষুদ্র শিল্পে ৩৯ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৩ লক্ষ লোকের সরকারি চাকরি হয়েছে। আরও ২ লক্ষ সরকারি চাকরি পাবেন। ১২ লক্ষ মানুষ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদেরও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
বিরোধীরা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছে না। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, ‘‘৩৯ লক্ষ কর্মসংস্থান কোথায় হয়েছে, কেউ জানে না! ওঁর দলের বিধায়কেরা কি এই কর্মসংস্থান দেখতে পাচ্ছেন?’’ চাকরির আবেদন-পত্র তুলতে গিয়ে বেকারদের পুলিশের লাঠি খেতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। বিজেপি-র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘ওই ৩৯ লক্ষ কর্মসংস্থানের মধ্যে নিশ্চয়ই সিন্ডিকেটের কর্মীদেরও ধরা আছে!’’