আলাদা মোটরযান আইন চান মুখ্যমন্ত্রী

নিয়ন্ত্রণের আইন আছে ঠিকই। তবে তার থেকেও বেশি আছে যানবাহনের বেয়াড়াপনা। কিন্তু মোটরযান আইনটা যে-হেতু কেন্দ্রের, রাজ্য সরকার তাই বেপরোয়া গাড়িচালকদের শায়েস্তা করতে পারে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৬
Share:

পথ-নিরাপত্তা নিয়ে অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার নজরুল মঞ্চে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

নিয়ন্ত্রণের আইন আছে ঠিকই। তবে তার থেকেও বেশি আছে যানবাহনের বেয়াড়াপনা। কিন্তু মোটরযান আইনটা যে-হেতু কেন্দ্রের, রাজ্য সরকার তাই বেপরোয়া গাড়িচালকদের শায়েস্তা করতে পারে না। এই অবস্থায় রাজ্যের জন্য পৃথক মোটরযান আইনের দাবি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিছক দাবিতেই থেমে না-থেকে কী ভাবে আলাদা আইন তৈরি করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার জন্য পরিবহণ ও পুলিশের কর্তাদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

পথ-নিরাপত্তা নিয়ে শুক্রবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে পরিবহণ দফতরের কর্তা এবং কলকাতা পুলিশের অফিসারের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই বেপরোয়া যান চলাচলের প্রসঙ্গ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মোটর ভেহিক্‌লস অ্যাক্ট বা মোটরযান আইন কেন্দ্রের হাতে থাকায় রাজ্য ইচ্ছে করলেও তার বাইরে যেতে পারে না। তিনি বলেন, ‘‘আমি কিন্তু মনে করি, মোটরযান চলাচলের ব্যাপারে রাজ্যের পৃথক আইন থাকা উচিত।’’

পরিবহণ দফতরের খবর, এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক নতুন বিলের যে-খসড়া পাঠিয়েছিল, তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে রাজ্য। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, নতুন বিলে মোটরযান আইনকে আরও বেশি করে কুক্ষিগত করতে চাইছে কেন্দ্র। তাতেই আপত্তি তুলেছে রাজ্য সরকার। সেই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘মোটরযান আইন সংশোধন নিয়ে কেন্দ্রে বিল আটকে রয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ রয়েছে। এ বিষয়ে বিরোধিতা করবে রাজ্য।’’ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি দেখতে বলেছেন তিনি।

Advertisement

রাজ্যের পৃথক মোটরযান আইন প্রণয়নের দাবি কেন, সেই ব্যাপারে নিজস্ব যুক্তিও দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমার রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে আমি তা মানব না। কোন দাদা কী বলল, তা আমি শুনব কেন? আমার রাজ্যে লোক মারা গেলে তো আমাকেই ধরবে।’’ পুলিশের একাংশের ব্যাখ্যা, মোটরযান আইন যথেষ্ট কড়া নয়। তার ফাঁক গলে অনেকেই পার পেয়ে যায়। রাজ্যের হাতে পৃথক বিধি তৈরির অধিকার থাকলে সেই সব ফাঁকফোকর ভরাট করা যেতে পারে।

ই-রিকশা চালু করার উপরেও এ দিন জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ২৫ লক্ষ সাইকেল দিয়েছি। আরও ১০ লক্ষ দেওয়া হবে। এটা এবং ই-রিকশাকে কেন্দ্র করেই এখানে শিল্প গড়ে উঠতে পারে।’’ সম্প্রতি রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর বক্তৃতার পরিপ্রেক্ষিতে বিধানসভায় বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও মুখ্যমন্ত্রীকে এই প্রস্তাব দেন।

ভিন্‌ রাজ্যের গাড়ি এ রাজ্যে ঢুকলে কর নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিকিমে ভিন্‌ রাজ্যের গাড়ি সর্বত্র চলাচল করতে পারে না। অথচ পশ্চিমবঙ্গে ভিন্ রাজ্যের গাড়ি অবাধে চলে। মমতা জানান, ভিন্‌ রাজ্যের গাড়ি ঢুকে ব্যবসা করে যাচ্ছে। কিন্তু রাজ্য কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বার থেকে ভিন্ রাজ্যের গাড়ি ঢুকলে রেজিস্ট্রেশন ফি নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। রেজিস্ট্রেশনের এই ব্যবস্থা অপরাধ ঠেকাতেও সাহায্য করবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘রেজিস্ট্রেশন করলে বাইরে থেকে কোন গাড়ি আসছে, তার নথি থাকবে। ফলে ভিন্‌ রাজ্যের গাড়ি এসে অপরাধ করে পালালে তাকে খুঁজে বার করা যাবে।’’

পরিবহণমন্ত্রী জানান, অন্যান্য রাজ্যের গাড়ি পশ্চিমবঙ্গে ঢুকলে পৃথক রেজিস্ট্রেশন ফি নেওয়ার জন্য কী বিধি তৈরি করা যায়, সেই বিষয়ে তাঁর দফতর ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন