বিশ্বজিতের শেষযাত্রায় কাঁধ দিলেন কালামরা

জীবন তো আগেও হারিয়েছে বহু বার। এ বার মৃত্যুর কাছেও হার মানল ধর্মের আমরা-ওরা। মানিকচকের বিশ্বজিত রজকের শ্মশানযাত্রায় কাঁধ দিলেন হাজি মকলেসুদ্দিন, হাজি মালেক, শেখ কায়সুল, আবুল কালাম আজাদ। রীতি মেনে হরিধ্বনি, রাস্তায় খই ছিটোনো সবই করলেন তাঁরা। শেষমেশ সবটুকু নিয়ম মেনে গঙ্গার পাড়ে অন্ত্যেষ্টি।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

মালদহ শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৩৫
Share:

সম্প্রীতি: কায়সুল-কালামদের কাঁধেই শেষ যাত্রা বিশ্বজিতের। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

জীবন তো আগেও হারিয়েছে বহু বার। এ বার মৃত্যুর কাছেও হার মানল ধর্মের আমরা-ওরা।

Advertisement

মানিকচকের বিশ্বজিত রজকের শ্মশানযাত্রায় কাঁধ দিলেন হাজি মকলেসুদ্দিন, হাজি মালেক, শেখ কায়সুল, আবুল কালাম আজাদ। রীতি মেনে হরিধ্বনি, রাস্তায় খই ছিটোনো সবই করলেন তাঁরা। শেষমেশ সবটুকু নিয়ম মেনে গঙ্গার পাড়ে অন্ত্যেষ্টি।

বছর তেত্রিশের বিশ্বজিৎ রজক বছর দুয়েক ধরে ভুগছিলেন লিভার ক্যান্সারে। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী আর ছোট তিন কন্যা সন্তান। একমাত্র রোজগেরে ছিলেন তিনি নিজেই। তাই তাঁর অসুস্থতায় রীতিমতো পথে বসে পরিবারটি। দাদা রণজিৎ পরিবার নিয়ে পাশে থাকলেও ভাইয়ের পাশে দাঁড়ানোর সামর্থ্য নেই। অবস্থা বাড়াবাড়ি হলে মাসখানেক আগে গ্রামের মানুষদের বাড়ানো হাত ধরে বিশ্বজিতকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতায়। এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে দিন সাতেক আগে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তারপর আবার বাড়িতেই ফিরিয়ে আনা হয়।

Advertisement

মানিকচকের যে শেখপুরা গ্রামে বিশ্বজিতের বাড়ি, সেখানে হিন্দু বলতে শুধু তাঁদের পরিবারটিই। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘‘আমরা চাঁদা তুলে চিকিৎসার জন্য ওকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানকার ডাক্তাররা মুম্বই নিয়ে যেতে বলেছিলেন। সেই অর্থ আর জোগাড় করতে পারিনি।’’ সোমবার রাতে মারা যায় বিশ্বজিৎ।

আরও পড়ুন: ঝাঁঝরা হয়ে ফিরল ৩ ছেলে

বিপত্তির বাকিটুকু এরপরে। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে, সৎকার হবে কী করে এই প্রশ্নের কাছে হার মানে শোকও। বয়সের ভারে নুব্জ বাবা নগেন রজক তখন হাউহাউ করে কাঁদছেন। দিশাহারা বিশ্বজিতের স্ত্রী সরমা। তখনই পাশে এসে দাঁড়ান শেখ কায়সুল, আবুল কালামরা। মঙ্গলবার সকালে মৃতদেহ শ্মশানে নেওয়ার জন্য বাঁশের মাচা তৈরি করা থেকে শুরু করে, সৎকারের আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র তাঁরাই কিনে আনেন চাঁদা তুলে। শুধু তাই নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের সেই মানুষরাই প্রায় ছয় কিলোমিটার কাঁধে করে বিশ্বজিতের দেহ বয়ে নিয়ে গেলেন মানিকচকের গঙ্গার পাড়ে। হিন্দু রীতি মেনে দাহও করেন। মুখাগ্নি করেন দাদা রণজিতের ছেলে।

শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন মালদহ জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘ধর্মের নামে দেশে যা চলছে তাতে শেখপুরার ঘটনা গোটা দেশকে পথ দেখাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন