ছবি: সংগৃহীত
রাশভারী ভঙ্গিতে বাজেট পড়তে পড়তে ওই একটা জায়গায় এসে একটু থেমে হেসে ফেললেন তিনি। নির্দিষ্ট ঘোষণা করতে অবশ্য ভুললেন না। বাজেট শেষে গ্যালারি থেকে নেমে অনুজ বিধায়ক ধরলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে। ‘‘তখন হাসছিলেন কেন?’’ আবার হেসেই জবাব দিলেন অর্থমন্ত্রী, ‘‘কী করব? তোর মুখটা মনে পড়ে যাচ্ছিল! কেলেঘাই-কপালেশ্বরী এত বার বলেছিস!’’
কেলেঘাই-কপালেশ্বরী খ্যাত সেই মানস ভুঁইয়ার বিধানসভার ইনিংসে যবনিকা পড়ে গেল সোমবার। তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভার প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেশ করবেন বলে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের বিধায়ক-পদ ছেড়ে দিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে, এমন দিনে মানসবাবুর বিধায়ক জীবনে ইতি পড়ল, যে দিন রাষ্ট্রপতি ভবনে শেষ রাত কাটালেন প্রণব মুখোপাধ্যায়! অর্থমন্ত্রী হিসাবে যিনি কেলেঘাই-কপালেশ্বরীর প্রকল্পে বরাদ্দ ঘোষণা করেছিলেন। যিনি মানসবাবুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচারে গিয়ে ঠাট্টার ছলে বলেছিলেন, ‘‘ওর নামটা বদলে সবং ভুঁইয়া করে দেব ভাবছি!’’
কংগ্রেসের নিতান্ত অনামী মুখ হিসাবে ১৯৮২ সালে সবং থেকে বিধানসভায় জিতে এসেছিলেন মানসবাবু। বাগ্মিতার জোরে বাম জমানায় দুই মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্নেহের পাত্র ছিলেন। কালে কালে বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক, কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং এক বছর চার মাসের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জোট মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। শেষ একটা বছর অবশ্য কেটেছে চরম বিতর্ক ও তিক্ততায়। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের সুপারিশ না মেনে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মানসবাবুকে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)-র চেয়ারম্যান মনোনীত করায় কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব শুরু। তার পরে কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড, বিধানসভায় বিরোধী দলের ঘরে জায়গা না পেয়ে লবিতে ২১ দিন বসে থাকা এবং শেষমেশ মমতার হস্তক্ষেপে তৃণমূলের পতাকা হাতে নেওয়া। যে কারণে এ দিন স্পিকারের কাছে ইস্তফা দেওয়ার পরে মানসবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিধানসভার সঙ্গে এত দিনের সম্পর্ক কাটিয়ে ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বঙ্গীয় কংগ্রেসের কারাগার থেকেও এখন আমি মুক্ত!’’
রাজ্যসভার প্রার্থীর ইস্তফা এ দিনই মঞ্জুর করে নিয়েছেন স্পিকার। আর মানসবাবুর পক্ষে আরও স্বস্তির তথ্য, সবংয়ের যে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কিছুতেই তাঁকে মেনে নিচ্ছিলেন না, তাঁরাও এখন নরম। অমূল্য মাইতি, প্রভাত মাইতিরা রবিবারই সবংয়ে বিধায়কের বিদায়ী কর্মিসভায় হাজির হয়ে বলেছেন, মানসবাবু জাতীয় রাজনীতিতে চলে যাওয়ায় উন্নয়নের বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে বলে তাঁরা আশা করছেন। বিধানসভা থেকে সংসদের দিকে পা বাড়িয়ে আর এক বৃত্ত সম্পূর্ণ হল ‘সবং ভুঁইয়া’রও!