ভারতী ঘোষ
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা এমপিএসের মামলায় অসহযোগিতা করার অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে। আর সে কথা জেনে ক্ষিপ্ত প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর শুক্রবার সরকারি আইনজীবীকে বলেন, ‘‘আপনার মহান পুলিশ সুপারকে বলে দেবেন, হাইকোর্ট যখন গুদামগুলি খুলে মজুত মালপত্রের হিসেব নিতে নির্দেশ দিয়েছে, সেটা বুঝেশুনেই দিয়েছে।’’
এমপিএসের সব অফিস বন্ধের পরে লগ্নিকারীদের টাকা ফেরাতে সংস্থার যাবতীয় সম্পত্তির খতিয়ান পেশের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। ঝাড়গ্রামে এমপিএসের সহযোগী সংস্থার অফিস ও গুদামে কত জিনিস মজুত রয়েছে, তার দাম কত, সে সবও হিসেব করে আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ দিন এমপিএসের সহযোগী সংস্থার আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী আদালতে জানান, ঝাড়গ্রামের গুদামগুলি ভারতী ঘোষ খুলতেই দেননি। এরপরই প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, আগামী সপ্তাহে এমপিএসের ঝাড়গ্রামের সব গুদাম খুলে মজুত মালপত্রের হিসেব নিতে হবে। সে সব বিক্রির পরে ৯০ শতাংশ টাকা হাইকোর্টে জমা রাখবে বলে আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার ভারতীদেবী অবশ্য অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে এত দিন আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। এ দিনই সরকারি আইনজীবীর থেকে বিষয়টি জেনেছি। আদালতের নির্দেশ মতোই পদক্ষেপ করব।’’ তাঁর বিরুদ্ধে এমপিএসের সহযোগী সংস্থার তরফে আদালতের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন ভারতীদেবী।
ঝাড়গ্রাম শহরের উপকণ্ঠে দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দিঘিশোল মৌজায় চারশো একর জায়গা জুড়ে ছিল এমপিএস-এর বহুমুখি কৃষিখামার ও বাণিজ্যিক ভবন। সেখানে মিনারেল ওয়াটার তৈরিরও কারখানা, বিলাস বহুল রিসোর্ট, একাধিক রেস্তোরাঁ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগও ছিল। অভিযোগ, ওই কর্মকাণ্ড দেখিয়েই বাজার থেকে টাকা তুলত এমপিএস। সেবি-র নিষেধ সত্ত্বেও এমপিএস বাজার থেকে টাকা তুলছে বলে সম্প্রতি হাইকোর্টে অভিযোগ জানান ওই সংস্থার কিছু লগ্নিকারী। বাজার থেকে টাকা তোলার রসিদও জমা পড়ে আদালতে। তার ভিত্তিতে বিচারপতি সৌমিত্র পাল মাসখানেক আগে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে নির্দেশ দেন, রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এমপিএসের সব অফিস বন্ধ করে দিতে হবে। সেই মতো ঝাড়গ্রাম-সহ রাজ্যের সর্বত্র এমসিএসের অফিসে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় এমপিএসের সহযোগী তিনটি সংস্থার বিভিন্ন অফিসও।
এরপরই ওই সহযোগী সংস্থাগুলির তরফে আদালতে জানানো হয়, পুলিশ অফিস ও গুদাম বন্ধ করে দেওয়ায় মিনারেল ওয়াটার, জ্যাম, জেলি, আচার তৈরির কারখানায় উৎপাদিত জিনিস বিক্রি করা যাচ্ছে না। তখন আদালত অফিস ও গুদামে মজুত পণ্যের হিসেব জমা দিতে বলে। আগামী ৯ জুন ফের এমপিএসের মামলার শুনানি হবে।