শোকে গ্রাম, ভয়ে ছাড়ছেন অনেকেও

সকাল থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম দাড়িভিটায় সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল। দুই যুবকের মৃত্যু যেন পাশাপাশি দুই গ্রামকে বাগ্‌রুদ্ধ করে দিয়েছে। মৃত তাপস বর্মণের মা মঞ্জু বর্মণ বাড়ির বারান্দায় বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন। আশেপাশের প্রতিবেশীরাও জড়ো হয়েছেন তাঁদের বাড়িতে। শোকে মুহ্যমান হয়ে গিয়েছে গোটা পরিবার। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৬
Share:

শোকাহত: ভেঙে পড়েছেন গুলিতে মৃত ছাত্র রাজেশ সরকারের বাবা ও তাপস বর্মণের বাবা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

ছবির মতো দু’টি গ্রাম দাড়িভিট ও পাশের সুখানিভিটা। কিন্তু স্কুলে গোলমালের সময়ে গুলিতে ২ ছাত্রের মৃত্যুর জেরে সেই শান্ত-সবুজ ছবি আর নেই। দুটি গ্রামেই শোকের ছায়া। কোথাও ক্ষোভে ফুঁসছেন বাসিন্দারা। আবার কোথাও পুলিশের ধরপাকড়ে কে কখন ধরা পড়া যাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা। বিশেষত, কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম শিবিরের দিকে ঝুঁকে থাকা বাসিন্দারা যেন বেশি ভীত-সন্ত্রস্ত। কংগ্রেস-বিজেপি, বামেরা আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে জানান, পুলিশের দায়ের করা মামলায় কে কবে ধরা পড়বেন, সেই ভয়েই পুরুষরা অনেকে এলাকা ছেড়েছেন।

Advertisement

সকাল থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম দাড়িভিটায় সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল। দুই যুবকের মৃত্যু যেন পাশাপাশি দুই গ্রামকে বাগ্‌রুদ্ধ করে দিয়েছে। মৃত তাপস বর্মণের মা মঞ্জু বর্মণ বাড়ির বারান্দায় বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন। আশেপাশের প্রতিবেশীরাও জড়ো হয়েছেন তাঁদের বাড়িতে। শোকে মুহ্যমান হয়ে গিয়েছে গোটা পরিবার।

এদিন স্কুলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, স্কুলের বেশির ভাগ দরজাই খোলা বাইরে জরুরি কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে। স্কুলের ভিতরে কম্পিউটার, চেয়ার, টেবিল সমস্ত ভাঙা অবস্থায় পড়ে। স্কুলের মাঠে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ জামা কাপড় পড়ে রয়েছে। দু’টো বাইক পোড়া অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। ক্লাসরুমের ভিতরের সিলিং ফ্যানগুলো ভাঙা। শিক্ষক শিক্ষিকাদের বসার ঘর তচনচ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই ছাত্র গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে পুলিশ ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যেতেই উত্তেজিত জনতার দখলে চলে যায় গোটা স্কুল। তারাই স্কুলে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। ওই ঘটনার পর ওই স্কুলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্‌ধ ডেকেছে ছাত্র ছাত্রীরা। সিপিএমের ছাত্র সংগঠনও আজ শনিবার উত্তর দিনাজপুর জেলায় ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ঘটনার পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ কুন্ডুর মোবাইলে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Advertisement

এ দিন শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাপস বর্মনের দেহ ময়না তদন্ত করতে পুলিশ গড়িমসি করছিল অভিযোগে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়। মর্গের সামনে বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশ এত বড় একটা ঘটনার পর যে ভাবে দেহ ময়না তদন্ত করতে অযথা দেরি করছে তা সভ্য সমাজে হয় না।’’ পরে বিকেলের দিকে মৃত তাপসের দেহ তুলে দেওয়া হয়। বিকেল ৫টা নাগাদ দেহ নিয়ে তার পরিবারের লোকজনেরা দাড়িভিটার পথে রওনা হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন