West Bengal SIR

২০০২ সালের তালিকায় নাম আছে? হাতড়েই বেড়াচ্ছেন বহু ভোটার! খোঁজার কাজে সাহায্য করছে না কমিশনের হেল্পডেস্কও

২০০২ সালের তালিকায় নাম খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বহু ভোটার। ভূরি ভূরি অভিযোগও জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। অনেকেই জানেন না, বর্তমানে মৃত তাঁদের বাবা-মা সিকি শতাব্দী আগে কোন বুথের ভোটার ছিলেন। সমস্যা আরও বহু ধরনের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৫৭
Share:

বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন বিএলও-রা। —ফাইল চিত্র।

২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম আছে কি না, জানেন না হুগলির সপ্তগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা রানা দত্তগুপ্ত। কী ভাবে নাম খুঁজবেন, জানেন না তা-ও। কারণ, বুথেরই নাম জানা নেই। রানাদের ঠিকানা বদল হয়েছিল ২০০৫ সালে। কিন্তু ২০০২ সালে তাঁরা কোন বুথের ভোটার ছিলেন এবং কোথায় ভোট দিতে যেতেন, তা মনে করতে পারছেন না। সপ্তগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের (সাবেক বাঁশবেড়িয়া কেন্দ্র) ১৭২ নম্বর বুথের (ভোটকেন্দ্র বাঁশবেড়িয়া মিউনিসিপাল প্রাথমিক বিদ্যালয়) তালিকায় রানার পরিবারের অন্য আত্মীয়দের নাম থাকলেও, নেই রানার বাবা হরিদাস দত্তগুপ্তের নাম। এই পরিস্থিতে রানা বুঝতে পারছেন না, কী ভাবে এনুমারেশন ফর্ম ফিল আপ করবেন।

Advertisement

একই ভাবে আতান্তরে পড়েছেন বেলগাছিয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দক্ষিণদাঁড়ি রোডের বাসিন্দা সুদীপা দাশগুপ্তও। ১৯৯৫ সালে কলকাতার তালতলার বাসিন্দা ছিলেন সুদীপার বাবা সজল দাশগুপ্ত। ২০০৫ সালে তাঁরা ঠিকানা বদলে বেলগাছিয়ার বাসিন্দা হয়েছিলেন। নতুন ঠিকানায় ভোটার কার্ডও হয়েছে। সম্প্রতি সুদীপা দেখেন, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তালতলার ঠিকানায় পরিবারের অন্য সদস্যদের নাম থাকলেও, নেই শুধু তাঁর মা-বাবার নাম।

২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজের নাম খুঁজে পাচ্ছেন না কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা এক ডব্লিউবিসিএস অফিসারও। তিনি স্ত্রীর নামও খুঁজে পাননি ভোটার তালিকায়। ২০০৯ সালে তাঁরা ঠিকানা বদল করেছিলেন। কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেই তাঁদের ঠিকানা বদল হয়েছিল।

Advertisement

২০০২ সালে নদিয়ার হরিণঘাটা কেন্দ্রের ভোটার ছিলেন মিতা ভট্টাচার্য। বর্তমানে তিনি উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির বাসিন্দা। তিনিও মনে করতে পারছেন না, হরিণঘাটায় তিনি কোন বুথের ভোটার ছিলেন এবং কোথায় ভোট দিতে যেতেন। ফলে তিনিও নিজের নাম খুঁজে পাননি ২০০২ সালের ভোটার তালিকায়।

এ রকম আরও ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। অভিযোগকারী ভোটারদের দাবি, ২০০২ সালের তালিকায় নিজেদের নাম খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কারণ অনেকেই জানেন না, বর্তমানে তাঁদের মৃত বাবা-মা সিকি শতাব্দী আগে কোন বুথের ভোটার ছিলেন। সমস্যা আরও বহু ধরনের। এর ফলে কী ভাবে তাঁরা এনুমারেশন ফর্ম ফিল আপ করবেন, তা-ই বুঝে উঠতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েও তেমন সুরাহা হয়নি আতান্তরে পড়া এই ভোটারদের। নির্বাচনের কমিশনের একটি হেল্পডেস্ক আছে বটে। কিন্তু সব তথ্য দিতে না পারলে, হেল্পডেস্কে কর্মরতেরাও ভোটারদের নাম খুঁজে বার করতে পারছেন না ২০০২ সালের তালিকা ঘেঁটে। হেল্পডেস্কে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘সব তথ্য দিতে না পারলে আমাদের পক্ষে এটা খুঁজে বার করা মুশকিল।’’

এখন বুথ লেভেল অফিসারেরা (বিএলও) বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন এনুমারেশন ফর্ম দিতে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁরা নাম খুঁজে পাচ্ছেন না, তাঁদের অনেকে বিএলও-দের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, বিএলও-রাও সাহায্য করতে পারছেন না। বিএলও-দের একাংশের বক্তব্য, যাঁরা ঠিকানা বদল করেছেন, তাঁদের তথ্য খোঁজা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে আপাতত কমিশনের দিকেই তাকিয়ে ভোটারেরা। তাঁদের দাবি, কমিশন অন্তত বলে দিক, কী ভাবে এনুমারেশন ফর্ম তাঁরা ফিল আপ করবেন। এ ছাড়া আর কোন নথি দেখালে এই সমস্যা মিটতে পারে, তা-ও কমিশনের জানিয়ে দেওয়া উচিত বলেই মনে করছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement