‘আজ বুঝলি তোর বাবা কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন!’

একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাড়ির বাইরে পা রেখে মিতা মুখোপাধ্যায় বলে উঠলেন, “আজ বুঝলি তোর বাবা কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন। কত মানুষ এসেছে দেখ।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০২:০৪
Share:

স্বজনহারা: ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হানায় নিহত সিআইএসএফ জওয়ান দীনাঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের কফিনবন্দি দেহের সামনে পরিজনেরা। শুক্রবার বর্ধমানের বাড়িতে। ছবি: উদিত সিংহ

রাস্তা লোকে লোকারণ্য। পাশের ক্লাবের মাঠেও সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মানুষ।

Advertisement

একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাড়ির বাইরে পা রেখে মিতা মুখোপাধ্যায় বলে উঠলেন, “আজ বুঝলি তোর বাবা কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন। কত মানুষ এসেছে দেখ।’’

চোখের জল বাগ মানছিল না। কাপড় দিয়ে চোখ মুছতে মুছতেই বললেন, “এত দিন তোমার আসা কেউ টের পেত না। আর আজ দেখ, তুমি আসবে বলে কত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন।’’

Advertisement

শুক্রবার সকালে রায়পুর থেকে ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলায় নিহত সিআইএসএফ-এর প্রধান কনস্টেবল দীনাঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের দেহ কলকাতায় আসে। বিমানবন্দরে তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। সেখানে সিআইএসএফ-এর আইজি এ এন মহাপাত্র উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে দেহ চলে যায় বর্ধমানের বাড়িতে। বেলা সওয়া ২টো নাগাদ বর্ধমানের ইছলাবাদের বাড়িতে পৌঁছয় দেহ।

আরও পড়ুন: ‘তোমাকে মেরে মাওবাদীদের কী লাভ হল?’

বৃহস্পতিবার রাতেই মিতাদেবী জানিয়েছিলেন, কলকাতা থেকে ভোটের জন্য দন্তেওয়াড়া পাঠানো হয়েছিল দীনাঙ্করবাবুকে। তিনি ৫০২ নম্বর ব্যাটেলিয়নের ‘বি’ কোম্পানির সদস্য ছিলেন। দন্তেওয়াড়াতে থাকা জওয়ানদের মেস-ইনচার্জ ছিলেন তিনি। সকালে বাসে করে মেয়ের বাজার করতে যাচ্ছিলেন। যেতে যেতে স্ত্রীকে ফোনও করেছিলেন। ফিরে ফের ফোন করার কথা ছিল তাঁর। তার আগেই স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পান মিতাদেবী।

এ দিন বাড়ি থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ইছলাবাদ ইউথ ক্লাবের মাঠে। দু’জায়গাতেই হাজার হাজার মানুষের ভিড়। বাড়ির সামনে কফিন খোলার পরে শাঁখা-পলা খুলে স্বামীর দেহের পাশে রাখেন মিতাদেবী। রজনীগন্ধা ও আকন্দ ফুলের মালাও দেন তাঁকে। গঙ্গাজল, চন্দনকাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে দেহ ঢেকে দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার রাতেই সব ব্যবস্থা করতে দুর্গাপুর থেকে বর্ধমানে চলে আসে সিআইএসএফের একটি দল। শুক্রবার সিনিয়র কমান্ড্যান্ট (সাউথ ইস্টার্ন সেক্টর) শরদ কুমারের নেতৃত্বে আরও একটি দল দুর্গাপুর থেকে বর্ধমানে আসে। এ দিন ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার পরে নিহতের ছেলে দেবজিতের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়। নিহত জওয়ানকে শ্রদ্ধা জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। মাঠে ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগী, প্রাক্তন কাউন্সিলর খোকন দাস, জেলা পরিষদ সদস্য গার্গী নাহা প্রমুখ। শহরের নির্মল ঝিল শ্মশানঘাটেও ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। সেখানে ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।

সিআইএসএফের কমান্ড্যান্ট শরদ কুমার বলেন, “এত মানুষের ভিড়ই বলে দিচ্ছে উনি খুবই জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন