Maoist

জঙ্গলমহলে ‘অ্যাকশন’ নিতে তৈরি হচ্ছে নবান্ন

মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সাম্প্রতিক কালে জঙ্গলমহলে ঘটে যাওয়া ঘটনা হাল্কাভাবে নিচ্ছে না নবান্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:৫১
Share:

মাওবাদী দমনে রাজ্যের বিশেষ কমান্ডো বাহিনীর দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হল অজয় নন্দকে (বাম দিকে)। ফাইল চিত্র।

মাওবাদী দমনে তৈরি রাজ্যের বিশেষ কমান্ডো বাহিনী কাউন্টার ইন্সারজেন্সি ফোর্স (সিআইএফ)-এর দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হল অজয় নন্দকে। বুধবাবার রাজ্য পুলিশের শীর্ষ স্তরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রদবদল হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সিআইএফের দায়িত্বে অজয় নন্দকে ফিরিয়ে আনা।

Advertisement

বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সাম্প্রতিক কালে জঙ্গলমহলে ঘটে যাওয়া ঘটনা হাল্কাভাবে নিচ্ছে না নবান্ন। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি থানা এলাকায় বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই মাওবাদীর। ঘটনাগুলির সঙ্গে আদৌ কতটা মাওবাদীদের যোগ আছে তা তদন্ত সাপেক্ষ বললেও, নবান্ন যে পরিস্থিতি প্রথম থেকেই কড়া হাতে মোকাবিলা করতে চাইছে তা এ দিনের সিদ্ধান্তে অনেকটাই স্পষ্ট। কারণ বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ডিজি বীরেন্দ্র নিজে জঙ্গলমহল পরিদর্শন করে এসেছেন। তিনি রিপোর্ট দেওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নবান্ন সূত্রে খবর, অজয় নন্দকে সিআইএসএফের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা ইঙ্গিতপূর্ণ। কারণ আইজি পদমর্যাদার এই আইপিএস দীর্ঘদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি সেই সময়ে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে একাধিক অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে , বিশেষ করে মাওবাদী গেরিলা মোকাবিলার ক্ষেত্রে তাঁর পারদর্শিতা রয়েছে। ২০১০ সালে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের জওয়ানদের নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মাওবাদী মোকাবিলায় তৈরি বিশেষ বাহিনী গ্রেহাউন্ডের কায়দায় গড়ে তোলা হয় এই বিশেষ কমান্ডো বাহিনী। তাঁদের জঙ্গলযুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। অজয় নন্দ এর আগেও ওই বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন।

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এ রাজ্যে সংগঠন বাড়াতে দায়িত্ব রয়েছেন মাওবাদী নেতা (উপরে বাম দিক থেকে) মদন মাহাত, অসীম মণ্ডল ওরফে আকাশ, মিতা, (নীচে বাম দিক থেকে) সচিন, অনলদা, কানহুরাম মুন্ডা। ছবি সংগৃহীত।

নবান্ন সূত্রে খবর, জঙ্গলমহলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির সঙ্গে মাওবাদীদের সরাসরি যোগাযোগ কতটা তা তদন্ত সাপেক্ষ হলেও, গোয়েন্দা রিপোর্টে লাল গেরিলাদের জঙ্গলমহল সংলগ্ন এলাকায় গতিবিধি বাড়া বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রাজ্য গোয়েন্দাবাহিনী, সিআরপিএফ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্টেও উঠে এসেছে, ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার পাহাড় জঙ্গল ঘেরা এলাকার সংলগ্ন পড়শি ঝাড়খণ্ডে ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে লাল গেরিলারা। মূলত পূর্ব সিংভূমের ঘাটশিলা এবং সরাইকেলা-খরসোঁয়া এলাকায় নতুন নতুন গেরিলা স্কোয়াড সক্রিয় হয়ে উঠছে। সূত্রের খবর, গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের পূর্বাঞ্চলীয় ব্যুরোর দায়িত্বে দুই বর্ষীয়ান গেরিলা নেতা প্রশান্ত বসু এবং মিসির বেসরা থাকলেও, হাতে কলমে সংগঠন সংগঠন সামলাচ্ছেন ওই সংগঠনের দুই কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা পতিরাম মাঝি ওরফে অনলদা এবং অসীম মণ্ডল ওরফে আকাশ। গড়বেতার বাসিন্দা দ্বিতীয়জন সংগঠনের এ রাজ্যের দায়িত্বে। তাঁর নেতৃত্বে ইদানীং কালে এ রাজ্যের সীমানা এলাকায় শক্তি বাড়িয়েছে চারটি গেরিলা স্কোয়াড। একটির দায়িত্বে শালবনির করমশোল গ্রামের বাসিন্দা মদন মাহাতো। অন্য তিনটির দায়িত্বে কানহুরাম মুণ্ডা, মহারাজ প্রামাণিক এবং রামপ্রসাদ মান্ডি ওরফে সচিন। এরা তিনজনেই এরিয়া কমান্ডার এবং শেষের জনের স্ত্রী গেরিলা সংগঠনের মহিলা শাখার নেত্রী মিতা। মিতা আদতে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ার মেয়ে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় সেখানকার কয়েকজন মাওবাদী সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের একজন মিতা। এছাড়াও ডায়মন্ড হারবারের বাহাদুরপুরের বাসিন্দা কমল মাইতি নামে এক মাওবাদী সংগঠকের কথা জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন: অভিযুক্ত হবু স্বামী, তাই আগাগোড়া পুলিশকে মিথ্যা বলেন আনন্দপুরের নির্যাতিতা

সূত্রের খবর, গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ, এই স্কোয়াডগুলি সাম্প্রতিক সময়ে নতুন সদস্য নিয়োগ করেছে। ঝাড়খণ্ডের দিকে শক্তিশালী হয়েছে তাদের সংগঠন। সেই সংগঠন কাজে লাগিয়ে ফের এ রাজ্যে সাংগঠনিক প্রসার ঘটাতে চায় তারা। তাই এখন থেকেই মাওবাদী দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করছে সরকার। অন্যদিকে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলাও ‘শার্ক’ নামে একটি বিশেষ বাহিনী তৈরি করছে মাওবাদী দমনে।

আরও পড়ুন: চ্যালেঞ্জ নিয়ে মুম্বইয়ে কঙ্গনা, ফের বললেন ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর’

নবান্ন থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অজয় নন্দ যিনি রাজ্যের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের আইজি পদে ছিলেন, সেই পদে যাচ্ছেন বিণীত গোয়েল। তিনি ডিরেক্টর সিকিউরিটিজ পদে ছিলেন। নয়া নিরাপত্তা অধিকর্তা হলেন বিবেক সহায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন