মাওবাদী হামলায় স্বজনহারারাও এ বার পথে

রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আরও একটি স্বর সরব হল জঙ্গলমহলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০৪:০৭
Share:

পথে-প্রতিবাদে: ঝাড়গ্রামে মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

আদিবাসী যৌথ মঞ্চের পরে এ বার মাওবাদী পর্বে নিহত ও নিখোঁজদের পরিজনেরা। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আরও একটি স্বর সরব হল জঙ্গলমহলে।

Advertisement

পুনর্বাসন প্যাকেজ পাওয়া ‘খুনি’ মাওবাদীদের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম শহরে প্রতীকী পথ অবরোধ ও মিছিল করে ‘শহিদ ও নিখোঁজ পরিবারের যৌথমঞ্চ’। বৃষ্টির মধ্যে কয়েকশো লোকের মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে— জঙ্গলমহল জাগছে। মাওবাদীদের শাস্তি ছাড়াও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়ানো, পরিবার পিছু এক জনের চাকরি, নিখোঁজদের মৃত ঘোষণা, কৃষিঋণ মকুব, মাওবাদী হানায় আহতদের স্বাস্থ্যসাথীতে অন্তর্ভুক্ত করা, মৃত ও নিখোঁজের স্ত্রীদের বিধবা ভাতা-সহ দশ দফা দাবিতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেয় মঞ্চ। টানা আন্দোলনের ইঙ্গিতও দেওয়া হয়।

মাওবাদী পর্বে নিহত ও নিখোঁজদের পরিজনেরা এর আগে অসংগঠিত ভাবে নবান্নে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবে এখন ঝাড়গ্রামে সংগঠন গ়ড়েছেন তাঁরা। সেই যৌথমঞ্চের সম্পাদক শুভঙ্কর মণ্ডল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১২ সালে মাওবাদী হানায় নিহতদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ যাঁরা খুন করল, সেই মাওবাদীরাই পুনর্বাসন প্যাকেজ ও সরকারি চাকরি পেল। নিহত ও নিখোঁজদের পরিবার কিছুই পেল না!”

Advertisement

এই আন্দোলনের মধ্যে বিরোধীদের উস্কানি দেখতে পাচ্ছে তৃণমূল। দলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘বিজেপি ও সিপিএম নানা ভাবে জঙ্গলমহলকে অশান্ত করতে চাইছে। স্বজনহারা পরিবারগুলিকে ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা হচ্ছে।’’ আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকার কথা না মানলেও সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মহাশিস মাহাতো ও বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী এক সুরেই বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের দ্বিচারিতার ফলেই স্বজনহারানো পরিবারগুলি পথে নেমেছেন।’’

পরিসংখ্যান বলছে, মাওবাদী নাশকতা পর্বে জঙ্গলমহলে ৩৪৩ জন খুন হন। এখনও নিখোঁজ অন্তত আশি জন। নিহত ও নিখোঁজদের পরিজনেদের ক্ষোভ, ‘খুনি’ মাওবাদীরা সরকারি মোটা টাকার প্যাকেজ আর চাকরি পেয়ে নিশ্চিন্তে রয়েছে। অথচ তাঁদের দিন কাটছে চরম দুর্দশায়। নিহত কয়েক জনের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। আবার অনেকে পায়নি। যাঁরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তাঁদেরও প্রশ্ন— সামান্য ক’টা টাকায় কী হবে! চাকরি কই? নিখোঁজদের পরিবারের জন্যই বা কোনও প্যাকেজ নেই কেন?

ঝাড়গ্রামের বলদডুবা গ্রামের মন্মথ মাহাতোর বাবা ২০০৮ সালে মাওবাদীদের হাতে খুন হন। মন্মথ বলেন, ‘‘আমার মা কেন্দ্রের ৩ লক্ষ ও রাজ্যের এক লক্ষ টাকা পেয়েছেন। কিন্তু বাড়ির কেউ চাকরি পায়নি।” মিছিলে পা মেলানো সেবায়তনের কল্যাণী মাহাতোর স্বামী অসিত মাহাতো নিখোঁজ। কল্যাণীদেবী বলেন, ‘‘সংসারের একমাত্র রোজগেরে মানুষ না থাকলে কী হয় বুঝছি। ক্ষতিপূরণ আর চাকরি না পেলে বাঁচব কী ভাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন