রাতভর ঠিক মতো ঘুম হয়নি কারও। হাঁড়িতে ভাত চড়েনি। সকালে আলো ফুটতে না ফুটতেই ওই বাড়িতেই ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা। শহর থেকেও ছুটে গিয়েছেন অনেকে। গ্রামের দুই কিশোরীর নির্যাতনের ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না কেউ। ক্ষুব্ধ গ্রাম দাবি তুলছে বার বার, অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তি চাই। কেউ কেউ ফাঁসির দাবিতেও সরব হয়েছেন। যুক্তি তাঁদের একটাই, আগামীতে কোনও গ্রামেই যাতে এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায় কেউ।
মাথাভাঙার হাজরাহাটের বেলেরডাঙা গ্রামের দুই কিশোরীর নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে একজোট হয়েছে গ্রাম। গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী নারায়ণ বর্মন বলেন, “ওই ঘটনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তির দাবি করছি।” ওই এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হাশেম আলি বলেন, “এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাতে আগামীতে কারও বাড়ির এত বড় ক্ষতি না হয়।” শনিবার রাতে কালী পুজোর ঠাকুর দেখতে যাওয়ার নাম করে দুই কিশোরীকে জোর করে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পড়শি দুই যুবক ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুই কিশোরীর একজন গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অপরজন বিষ খেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত টোটন সরকার এবং রুদ্র তালুকদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বাড়ির লোকের অবশ্য দাবি, তাদের ফাঁসানো হয়েছে।
এ দিন সকালে দুই কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিবেশীদের ভিড়। লাগোয়া দু’টি বাড়ি থেকেই ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। মৃত কিশোরীর মা মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন এখনও। তাঁর বাবার চোখ দিয়ে জল পড়েই চলেছে। যারা সান্ত্বনা দেবেন বলে এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরাও চোখের জল ধরে রাখতে পাচ্ছেন না। গ্রামের খুব সুনাম ছিল ওই কিশোরীর। নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। প্রতিবেশীরা জানান, কারও সঙ্গে কখনও খারাপ ব্যবহার করেনি। তাঁদের আত্মীয়া বলেন, “এমন ভাবে মেয়েদের কেউ সর্বনাশ করবে ভাবতে পাচ্ছি না। অপরাধীদের ফাঁসি চাই আমি।” অন্য পড়শিরা বলেন, “পুজোর দিনে এমন একটি ঘটনা ঘটবে, তা কেউ ভাবতে পারে না। আর ওঁরা এত ভাল মেয়ে সবাই জানে। ঘটনা শোনার পর থেকেই মন খারাপ হয়ে আছে।” তাঁদের আত্মীয়া প্রতিবেশী মীরা সরকার বলেন, “ওই ঘটনার পর থেকে নাওয়া-খাওয়া প্রায় বন্ধ। আসলে কিছুতেই আর ভাল লাগছে না।”
এ দিন ওই বাড়িতে যান মাথাভাঙা শ্রমিক তৃণমূলের নেতা আলিজার রহমান, মাথাভাঙা-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আবু তালেব আজাদ। তাঁরাও অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি করেছেন। অল ইন্ডিয়া মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়ে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি করা হয়।