Mayapur

মায়াপুরে ইসকন মন্দিরে তালা, নজরে বিদেশ ঘুরে আসা ভক্তেরা

শুধুমাত্র পুরোহিত আর ভোগ রান্নায় নিযুক্ত ভক্ত ছাড়া মূল মন্দিরের দরজাও সাধারণ মানুষ, আবাসিক, ভক্ত সকলের জন্য বন্ধ ছিল এ দিন।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

মায়াপুর শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ১৭:০৬
Share:

শূন্য মন্দির: মায়াপুর ইস্কনে মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র

মন্দিরে ঢোকার সব ক’টা গেট বন্ধ। গেটের ভিতর নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আর কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। মন্দির চত্বরে একটি মাত্র মুদিখানার দোকান বাদে বাকি সব কিছু বন্ধ। মন্দিরের ভিতরের সমস্ত গেস্ট হাউসগুলি ফাঁকা, অতিথির চিহ্নমাত্র নেই।

Advertisement

এটাই ছিল মঙ্গলবার লকডাউনের পর মায়াপুর ইসকন মন্দিরের ছবি।

শুধুমাত্র পুরোহিত আর ভোগ রান্নায় নিযুক্ত ভক্ত ছাড়া মূল মন্দিরের দরজাও সাধারণ মানুষ, আবাসিক, ভক্ত সকলের জন্য বন্ধ ছিল এ দিন। যাঁরা মন্দির চত্বরে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গেটে সেই পরিচয়পত্র দেখিয়ে, শরীরের তাপমাত্রা মেপে তার পর ঢুকতে পারছেন তাঁরা।

Advertisement

এ দিন দেখা গেল, গেটের বাইরেও দোকানপাট সব বন্ধ। পথচলতি মানুষকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মন্দিরের গেট সকলের জন্য শেষ বারের মতো খোলা হয়েছিল গত শনিবার। গত শুক্রবার থেকে সাধারণের জন্য দুপুরের প্রসাদ খাওয়ার ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখানে এক সঙ্গে বহু মানুষ বসে খেতেন, যা থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকতে পারে ভেবে এটি করা বলে জানান মন্দির কমিটি।

আরও পড়ুন: করোনা ত্রাণে সাহায্য করুন, আর্জি মমতার

মঙ্গলবার মায়াপুরে নিজের ঘরে বসে ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘‘২০০০ সালের বন্যার সময়েও এমন সুনসান দেখিনি ইস্কন মন্দিরকে। সে সময়েও অনেক পর্যটক নৌকা করে মন্দিরে এসেছেন। আবাসিক ভক্তরা মন্দিরে ঢুকতে পারতেন সে সময়ে, এখন আবাসিক ভক্তদের জন্যও বন্ধ রয়েছে মন্দিরের দরজা। আমরা খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বেরোচ্ছি না।’’ খাবার ঘরে ন্যূনতম তিন ফুট দূরত্ব রেখে আবাসিক ভক্তদের খেতে বলছেন বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন: সংবাদপত্রে বিপদ নেই: হু

মন্দির চত্বরে এক কাপড়ের দোকানের কর্মচারী বিশ্বনাথ দেবনাথ বলেন, ‘‘দোকান বন্ধ। এখন বাড়িতেই সময় কাটছে।’’ সব কিছু স্বাভাবিক না হলে তাঁদের মতো সাধারণ মানুষ, ছোট ব্যবসায়ীদের পেটে টান পড়বে বলে আশঙ্কা বিশ্বনাথের।

মায়াপুর ইস্কন চত্বরে প্রচুর বিদেশি ভক্ত আছেন, তাঁরা কেমন আছেন? ইস্কনের নিরাপত্তা দফতরের প্রধান অলয় গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘দেশি, বিদেশি সব ভক্ত আর আবাসিক কেউ-ই ঘরের বাইরে বেরোচ্ছেন না। প্রয়োজনে আমরা গ্যাস থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তাঁদের বাড়িতে দিয়ে আসছি।’’

দোলের পর ইস্কন মন্দিরের আশপাশের কিছু ভক্ত পুরী, বৃন্দাবন বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পর তাঁদেরও ১৪ দিন ঘরে থাকার কথা বলা হয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে, তাঁরা যেন বাইরে না বেরোন।’’— এমনটাই বললেন অলয় গোবিন্দ।

তিনি আরও জানান, দিনতিনেক আগে থেকেই ইস্কনের সমস্ত গেস্ট হাউস খালি করে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় যদি সেগুলি প্রশাসনের কাজে লাগে, তা দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত রয়েছেন ইস্কন কর্তৃপক্ষ।

ইস্কন মন্দিরের ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল আছে। সেখানে তিন জন চিকিৎসক ও চার জন নার্স সবসময়ের জন্য থাকেন। এক জন সরকারি চিকিৎসকও আসতেন। যদিও গত মঙ্গল বার থেকে তিনি আসছেন না বলে জানান অলয় গোবিন্দ। গত সাত দিনে সর্দি, কাশি, জ্বরের উপসর্গ নিয়ে কোনও রোগী এই হাসপাতালে দেখাতে আসেননি। এমন ধরনের কোনও রোগীও এই মুহূর্তে সেখানে ভর্তি নেই বলেই জানা গেল।

অন্য দিকে, দোলের জন্য মায়াপুরে আসা বেশির ভাগ বিদেশিই দেশে ফিরে গিয়েছেন। যাঁরা রয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। গত ডিসেম্বর মাসে মায়ের সঙ্গে মায়াপুরে আসেন লিলি। এ মাসের ২৬ তারিখ তাঁর নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যাওয়া এক মাস পিছিয়ে দিয়েছেন লিলি। তিনি শুনেছেন, চিনে নাকি আবার নতুন করে সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের শহরে খুলে যাওয়া স্কুল, কলেজও আবার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তাই ও দেশে থাকা বাবা আর ভাইয়ের জন্য দুশ্চিন্তায় আছেন লিলি ও তাঁর মা।

এ দিন নবদ্বীপ থানার আইসি কল্লোলকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘মায়াপুর ফাঁড়ির পুলিশ পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে। প্রয়োজনে নবদ্বীপ থেকেও পুলিশকর্মীরা যাচ্ছেন।’’ প্রশাসন এই সময়ে কোনও অবস্থাতেই নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া রাস্তায় সাধারণ মানুষের জটলা বরদাস্ত করবে না বলেও জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন