শিলিগুড়ি মডেলের জনক অশোক ভট্টাচার্যের পুরবোর্ড ছেড়ে এ দিন তৃণমূলে নাম লেখালেন এক মেয়র পারিষদ। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে জার্নালিস্টস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে সেই কাউন্সিলর, ফরওয়ার্ড ব্লকের দুর্গা সিংহকে দলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
বিরোধীদের থেকে সদস্যরা যোগ দেওয়ায় সম্প্রতি মালদহ ও জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল। একই ভাবে তারা শিলিগুড়ির পুরবোর্ড দখল করবে কি না, তাই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। সেই জল্পনায় ইন্ধন দিয়ে কিছু দিন আগে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেছিলেন, অগস্ট মাস বিপ্লবের মাস! এ দিন দুর্গাদেবীর তৃণমূলের যোগদান অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘অশোকবাবু আগেও বলেছিলেন বামেদের কোনও কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন না। তাঁদের শরিক দল থেকেই এ দিন একজন যোগ দিলেন। বাকিটা আগামী দিনেই স্পষ্ট হবে।’’
সংখ্যায় মাত্র এক জন। কিন্তু তাঁর দলত্যাগ নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে শিলিগুড়ির রাজনীতিতে। এর বড় কারণ, এই পুরসভায় বামেরা ক্ষমতা ভোগ করছে সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। ৪৭ সদস্যের পুরবোর্ডে বামেদের সদস্য সংখ্যা এত দিন ছিল ২৩। এ দিন দুর্গার দলত্যাগের পরে তা কমে দাঁড়াল ২২-এ।
অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ম্যাজিক ফিগার ২৪-এর থেকে কম। উল্টো দিকে, তৃণমূল ১৭ থেকে বেড়ে ১৮ হল। যে নির্দল সদস্যের সমর্থন নিয়ে পুরবোর্ড গঠন করেছিলেন অশোক ভট্টাচার্য, সেই অরবিন্দ ঘোষ এখন খুবই অসুস্থ। কোনও কারণে অনাস্থা বা আস্থা প্রমাণে ভোট হলে আর অরবিন্দবাবু হাজির থাকতে না পারলে অশোককে ভরসা করতে হবে কংগ্রেসের উপরে। তাদের চার জন সদস্য রয়েছেন। বৃহস্পতিবার অবশ্য অশোককে ভরসা জুগিয়েছে কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকারের কথা। তিনি জানিয়েছেন, বাম পুরবোর্ডকে টিকিয়ে রাখতে তাঁরা সমর্থন দেবেন। তবে শঙ্করবাবুর কথাই যে দলের কাউন্সিলরদের কথা, এটা এখন হলফ করে কেউ বলতে পারছে না। অন্য দিকে, বিজেপিরও দু’জন সদস্য রয়েছেন। দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘কেউ অনাস্থা আনলে আমরা শিলিগুড়ির স্বার্থে যেটা ভাল হবে, সেটাই করব।’’
খোদ মেয়র অশোক ভট্টাচার্য হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘সাহস থাকলে তৃণমূল অনাস্থা আনুক। তৃণমূল নিজেদের সব কাউন্সিলরকে এক জায়গায় রাখতে পারবে তো!’’
এখন প্রশ্ন হল, তৃণমূল কি অদূর ভবিষ্যতে অনাস্থা আনবে? এ দিন তৃণমূল শিবিরের একাংশ দ্রুত আরও ৭-৮ জন বাম কাউন্সিলরকে দলে টেনে অশোকবাবুকে ক্ষমতাচ্যুত করার স্বপ্ন দেখলেও দলের শীর্ষ নেতারা এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। অরূপ বিশ্বাস পর্যন্ত বলেছেন, ‘‘আগামী দিনে কী হয় সময়ই বলবে।’’