পায়ে পায়ে ছুটছে বাঙালি বধূর ফুটবল ‘জয়ী’

রাজ্যের মহিলাদের সেলাই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ফুটবল তৈরি শেখানোর এই পরিকল্পনা বাংলারই ছয় প্রাক্তন ফুটবলারের। মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, কম্পটন দত্ত, নিমাই গোস্বামী ও মহিলা ফুটবলার শান্তি মল্লিক।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০৪:২১
Share:

প্রয়াস: ফুটবল সেলাইয়ে ব্যস্ত তারকেশ্বরের সোমা। —নিজস্ব চিত্র।

ওঁরা জীবনে ফুটবল খেলেননি। পাড়ার মাঠে কচিকাঁচাদের বল নিয়ে দাপাতে দেখা ছাড়া রোনাল্ডো, মেসি, মারাদোনা বা পেলের নামও ওঁরা জানেন না। অথচ ওঁদের হাতে তৈরি ফুটবল এখন বাজার মাতাতে তৈরি।

Advertisement

তারকেশ্বরের অপর্ণা, সোমা, চন্দননগরের নমিতা, হাওড়ার স্বর্ণালী বা নুসরতদের ইদানীং নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। মাথার উপরে কাজের বোঝা। ওঁদের তৈরি ফুটবল ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের অনুমোদন পেয়েছে। যার দৌলতে রাজ্যের যুবকল্যাণ দফতর থেকে দেড় লক্ষ বল তৈরির বরাত পেয়েছেন ওঁরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বাংলার এই মহিলাদের তৈরি ফুটবল ও ভলিবলই রাজ্যের ন’হাজার বিদ্যালয়ের পড়ুয়াকে বিলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মেয়েদের হাতে তৈরি এই ফুটবলের নাম রেখেছেন ‘জয়ী’। বলের উদ্বোধনও তিনিই করেছেন। মাস খানেক আগেই সরকারি বরাত পাওয়ার পরে এ বার অপর্ণাদের খোলা বাজারে হাতেখড়ি হতে চলেছে। ফুটবল, ভলিবলের সঙ্গে ওঁরা এখন ভলিবল খেলার নেটও তৈরি করছেন।

রাজ্যের মহিলাদের সেলাই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ফুটবল তৈরি শেখানোর এই পরিকল্পনা বাংলারই ছয় প্রাক্তন ফুটবলারের। মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, কম্পটন দত্ত, নিমাই গোস্বামী ও মহিলা ফুটবলার শান্তি মল্লিক। বছর দুয়েক আগে এই পরিকল্পনা দানা বাঁধে। রাজ্যের শিল্প দফতরের অধীনস্থ সংস্থা রিফিউজি হ্যান্ডিক্র্যাফটস-এর ম্যানেজিং কমিটিতে ওই ছ’জনকে মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়ে নিয়ে আসেন। শুরু হয় পরীক্ষামূলক ভাবে ফুটবল তৈরির কাজ। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের দাবি, রাজ্যের শিল্পসচিব রাজীব সিংহের সাহায্যে এই প্রকল্প সাফল্যের মুখ দেখেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:ইদে ফিরছে চাঁদ, উচ্ছ্বাসে ভাসছে সীমান্ত

বাঙালির সেরা খেলা ফুটবল বদলে দিয়েছে এই গৃহবধূদের রোজনামচা। নমিতা, নুসরত ও অপর্ণা বলেন, ‘‘বেশ আনন্দ হচ্ছে। হাতে দু’টো টাকা আসছে। সংসারে সুরাহা হচ্ছে।’’ সরকারি বরাত পাওয়ার পর ওঁরা ৫০০ জন মহিলা মিলে ৬০ হাজার ফুটবল তৈরি করে ফেলেছেন। এখনও বাকি ৯০ হাজার। বল পিছু ৫০ টাকা। দিনে গড়ে দু’তিনটি বল তৈরি করছেন ওঁরা। বাংলার প্রাক্তন মহিলা ফুটবলার শান্তি মল্লিক বলেন, ‘‘একেবারে আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন মেনেই ওঁরা বল তৈরি করছেন। ৪১০-৪৫০ গ্রাম ওজন ও ২৭-২৮ ইঞ্চি ব্যাসের বল।’’

আপাতত রাজ্যের তিনটি জায়গায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফুটবল ও ভলিবল তৈরি হচ্ছে। তারকেশ্বরের ভীমপুরে, হুগলির চন্দননগর ও হাওড়ার রামরাজাতলায়। বলের চাহিদা ও মেয়েদের আগ্রহ দেখে আগামী দু’বছরের মধ্যে আরও চার হাজার মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফুটবলের উৎপাদন শিল্পের সঙ্গে জুড়ে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।

সংস্থার চেয়ারম্যান মানস ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, মেয়েদের তৈরি এই ফুটবল পঞ্জাবের পাটিয়ালায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখানে ১০০-এ ৯৯ পেয়ে পাশ করেছে সে। এই মুহূর্তে রাজ্যের অনেক ফুটবল আকাদেমি ও বেসরকারি কোচিং সেন্টারে ‘জয়ী’ ফুটবলে খেলা হচ্ছে বলে দাবি মানসবাবুর। শান্তিদেবী বললেন, সাদামাঠা গ্রামের মহিলা, যাঁদের সঙ্গে ফুটবলের কোনও সম্পর্ক ছিল না, তাঁরাই এখন ফুটবলের কারিগর! এ বড় কম সাফল্য নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন