এমবিবিএসের স্বপ্নে ১৭ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্স-এ

নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের সীমান্তঘেঁষা গ্রাম প্রতাপপুরের বাসিন্দা প্রদীপ ১৭ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্সের পরেও এমবিবিএস ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ও সঙ্কল্পে অটল আছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, কৃতকার্য না-হওয়া পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেওয়ার প্রশ্ন নেই।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুস্মিত হালদার

কলকাতা ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ০৪:১০
Share:

অদম্য: প্রদীপ হালদার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন।

Advertisement

চটজলদি যেন-তেন-প্রকারে সাফল্যে পৌঁছনোর এই ইঁদুরদৌড়ের যুগে এমন সঙ্কল্প অনেকের কাছেই হাস্যকর মনে হতে পারে। ঊনপঞ্চাশে পা দেওয়া প্রদীপ হালদারের অবশ্য তা মনে হয় না। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের সীমান্তঘেঁষা গ্রাম প্রতাপপুরের বাসিন্দা প্রদীপ ১৭ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্সের পরেও এমবিবিএস ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ও সঙ্কল্পে অটল আছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, কৃতকার্য না-হওয়া পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেওয়ার প্রশ্ন নেই।

হতদরিদ্র দিনমজুর প্রদীপকে বয়স ও দারিদ্রের সঙ্গে যত না লড়তে হচ্ছে, তার থেকে বেশি লড়াই চালাতে হচ্ছে আত্মীয়-প্রতিবেশীদের ব্যঙ্গ আর স্ত্রীর গঞ্জনার সঙ্গে। ১৭ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েছেন। এ বছর মেডিক্যালের সর্বভারতীয় অভিন্ন প্রবেশিকাতেও বসেছেন। কাস্তে-কোদাল হাতে সারা দিন অন্যের জমিতে খাটুনির পরেও প্রদীপের চোখে স্বপ্ন— এক দিন এই হাতেই থাকবে স্টেথোস্কোপ।

Advertisement

টিনের চাল আর দরমার বেড়া দেওয়া ভাঙাচোরা ঘর প্রদীপের। বড় মেয়ে নিবেদিতা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে অপরাজিতা এ বার মাধ্যমিক পাশ করেছে। ছেলে প্রভাকর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। তারা জানায়, বাবা তাদের থেকে অনেক বেশি পড়াশোনা করেন। তবে অর্ধাঙ্গিনী বাসন্তী হালদারের খেদ, ‘‘ছেলেমেয়েগুলোর মুখে ভাল করে খাবার তুলে দিতে পারি না। আর ওঁর ডাক্তার হওয়ার জেদ! এই পাগলের পাল্লায় পড়ে জীবন শেষ হয়ে গেল।’’

এই ‘পাগলামি’র মানে জানতেন প্রাচীন কালের মুনিঋষিরা। আপনি জানলেন কী ভাবে?

প্রদীপ জানান, ক্লাসে প্রথম হতেন। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু অভাবের জ্বালায় মাধ্যমিকের পরে পড়া ছেড়ে মাঠে নামতে হয়। ১৯৯৮ সালে একটা কাগজের ঠোঙা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাতে বিজ্ঞাপন ছিল, একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি বয়সে পড়া যাবে। সেখান থেকেই ২০০০ সালে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ‘‘আমার মনে হয়েছে, ভগবান এ ভাবেই সুযোগ করে দিয়েছেন। পাশ করলেই সকলের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে,’’
প্রদীপের চোখে জ্বলজ্বল করে ওঠে শিক্ষাদীপ।

২০১৩-য় কলকাতার চিকিৎসক অমিয়কুমার মাইতির সঙ্গে আলাপ হয় প্রদীপের। তিনিই বিনা পয়সায় পড়াতে থাকেন। বই দেন। পরীক্ষার আগে লেক গার্ডেন্সে তাঁর বাড়ির একতলায় মাস দুয়েক থেকে তৈরি হন প্রদীপ। অমিয়বাবু বললেন, ‘‘এত চেষ্টা, এত নিষ্ঠা সচরাচর দেখা যায় না। উনি ঠিক পাশ করবেন। কয়েক বছর আগে মেদিনীপুরের অন্য এক বাসিন্দা আমার কাছে পড়ে ৪৫ বছর বয়সে ডাক্তার হয়েছেন।’’

তাঁর ছাত্র মৃদু হাসেন, ‘‘এক দিন সকলেই বলবে, ওই যে যাচ্ছে প্রদীপ হালদার, এমবিবিএস!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন