দিন পনেরো আগের কথা। নবান্নে দাঁড়িয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ ঘোষণা করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে শুরু হওয়া ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ উদ্যোগের ইতিবাচক ফল মিলতে শুরু করেছে। সরকারের দাবি ছিল, গত তিন মাসে কলকাতা লাগোয়া চারটি জেলায় পথ দুর্ঘটনা কমে গিয়েছে প্রায় ৫০%। এবং সেই তালিকায় নাম ছিল হুগলিরও।
কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে হুগলিরই সিঙ্গুরে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ার পরে পুলিশের দাবি বড়সড় ঠোক্কর খেয়েছে। যে কারণে জাতীয় ও রাজ্য সড়কে যান চলাচলে ‘শৃঙ্খলা আনার’ লক্ষ্যে বুধবার পুলিশের একাধিক বিভাগ এবং পূর্ত ও পরিবহণ-কর্তাদের নিয়ে তড়িঘড়ি বৈঠক করেন ডিজি। সেখানে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নবান্ন-সূত্রের ইঙ্গিত। কী রকম?
জানা যাচ্ছে, কোনও দুর্ঘটনার পিছনে চালকের গাফিলতির প্রমাণ মিললে তার লাইসেন্স বাতিল করবে পরিবহণ দফতর। পরে দুর্ঘটনার গুরুত্ব বিচারে পুলিশ সুপারিশ করবে, লাইসেন্সটি চিরতরে বাতিল করা হবে কি না। উপরন্তু ফাঁকা রাস্তায় তুমুল গতিতে বেপরোয়া গাড়ি চালালে চালক তো বটেই, প্রয়োজনে গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, জাতীয় সড়কে রাজ্য প্রশাসন নিজস্ব বিধি-নিষেধ বলবৎ করতে পারে কি না।
বছরখানেক আগে পুলিশ-প্রশাসন মিলে রাজ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিভিন্ন ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা’ (ব্ল্যাক স্পট) চিহ্নিত করেছিল। তার পরে সেখানে দুর্ঘটনা ঠেকাতে কী ধরনের ব্যবস্থা হয়েছে, সে সম্পর্কে অবশ্য এ দিন কোনও কর্তা মুখ খোলেননি। যদিও সূত্রের খবর: সিঙ্গুরের দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে জাতীয় সড়কে আরও বেশি ‘বে’ (মূল রাস্তার পাশে যেখানে একটা বা দু’টো গাড়ি দাঁড়াতে পারে) বাড়ানো যায় কি না, সে ব্যাপারে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) সঙ্গে আলোচনা করবেন রাজ্যের পুলিশকর্তারা। বৈঠকে এ-ও স্থির হয়েছে, রাজ্য সড়কে সিসিটিভি’র সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়েও এনএইচএআইয়ের সঙ্গে কথা হবে। ‘‘এনএইচএআই যেমন টোল আদায় করে, তেমন তাদের কাছে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স ও দুর্ঘটনায় সাহয্যের জন্য ফোন নম্বর ইত্যাদি আছে কি না, সে সব আমাদের দেখতে হবে।’’— মন্তব্য এক পুলিশ অফিসারের। এ ছাড়াও কিছু চিন্তা প্রশাসনের মাথায় আছে। যেমন, রাস্তার বাঁকের মুখে পেল্লায় হোর্ডিং থাকলে বিপদের আশঙ্কা। তাই পূর্ত দফতর অবিলম্বে তেমন সব হোর্ডিং সরাবে। জাতীয় সড়কগুলির পাশে ফাঁড়ি তৈরির প্রস্তাবও উঠেছে। সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি’রা তার রূপরেখা রচনা করবেন।
সর্বোপরি রাজ্য সড়ক হোক বা জাতীয় সড়ক, রাস্তার দু’ধারে কোনও অবস্থাতেই গাড়ি পার্কিং করা যাবে না বলে এ দিনের বৈঠকে কড়া সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই নিয়ম ভাঙলে যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে জন্য বিধি তৈরি হবে।