English Bazar

ভাল বাড়ি করে সবার নজরে পড়ে গিয়েছি, বলছেন ‘ফল বিক্রি করে প্রাসাদ বানানো’ তৃণমূল নেতা

মাইনুল বললেন, “লকডাউনে পাঁচ লক্ষ টাকার চালই বিলি করেছি। ইদ উপলক্ষে নিয়ম করে পোশাক বিলি করছি। মানুষের টাকা লুটের কোনও প্রশ্নই নেই।” মাইনুলের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, “ব্যবসা করে কেউ বাড়ি বানাতেই পারেন।”

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৫৩
Share:

প্রাসাদোপম: মাইনুল শেখের ঘরবাড়ি। মালদহের লক্ষ্মীপুরে। নিজস্ব চিত্র

মালদহ থেকে মানিকচক যাওয়ার রাজ্য সড়ক। রাজপথ ধরে লক্ষ্মীপুর গ্রামে পৌঁছতেই চোখ আটকে যাবে প্রাসাদোপম বাড়িতে। মালিক ইংরেজবাজার ব্লকের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মাইনুল শেখ। যাঁর বাড়িটি দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন টিম পিকে-র সদস্যরাও। লক্ষ্মীপুর গ্রামে কান পাতলেই শোনা যাবে সামান্য ফল বিক্রেতা থেকে মাইনুলের ‘রাজকীয়’ বাড়ির মালিক হওয়ার নেপথ্য কাহিনি। যদিও তিনি দাবি করেন, দলের নাম ভাঙিয়ে নয়, ব্যবসা করেই বানিয়েছেন ‘স্বপ্নের’ বাড়ি। তাঁর আক্ষেপ, “ভাল বাড়ি করেই সবার নজরে পড়ে গিয়েছি।”

Advertisement

ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর গ্রাম। বর্ধিষ্ণু এলাকা। এখানে যেমন ঝুপড়ি রয়েছে, তেমন রয়েছে বেশ কিছু পাকা বাড়িও। তবে মহল্লার সেরা বাড়ি কোনটি, জানতে চাইলে গ্রামের লোকজন এক কথায় দেখিয়ে দিলেন মাইনুলের বাড়িটি। তেমনই এক জন বলেন, ‘‘যেতে যেতে মাইনুলের বাড়ির দিকে ফিরে তাকায়নি, এমন লোক পাবেন না।’’

তাঁর দলের নেতাদেরই কেউ কেউ সে কথা মেনে নিলেন। এমনই এক তৃণমূল নেতা বলেন, “যাওয়া-আসার পথে মাইনুলের বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকি, আর নিজের বাড়ির কথা ভাবি মনে মনে।”

Advertisement

কেমন সে বাড়ি? ঢোকার দরজা যেন বিশাল তোরণ। ভিতরে ঢুকলে প্রথমেই মাঠের মতো কংক্রিটের উঠোন। তার শেষে পরপর দোতলা ও তিনতলা দু’টি বাড়ি একই চৌহদ্দির মধ্যে। বাড়ির ভিতরে একাধিক বাতানুকূল যন্ত্র। গ্যারেজে এসইউভি গাড়ি, দু’টি মোটর সাইকেল। বাড়ির পাশেই মাইনুলের রড, বালি, সিমেন্টের দোকান। সেখানে একটি ট্রাক্টরও রয়েছে।

গ্রামের লোকজন বলছেন, অথচ, বছর পাঁচেক আগে এখানেই পূর্ত দফতরের জমিতে ছিল একাধিক ঝুপড়ি। এমনই এক ঝুপড়িতে থাকতেন মাইনুলও। তাঁর বাবা সুবিরুদ্দিন শেখ ফেরিওয়ালার কাজ করতেন বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে মাইনুলই বড়। টাকার অভাবে পঞ্চম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা হয়নি বলে জানালেন মাইনুল নিজেই। এক সময় তিনি বাজারে ফলও বেচতেন।

কী ভাবে এখানে পৌঁছলেন? তিনি বলেন, “ফল বিক্রির সময়ই আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তখন আমের ব্যবসা করতাম। সেখান থেকেই জমি কেনাবেচার কাজে সহযোগিতা করতে শুরু করি। এখন জমি কেনাবেচার পাশাপাশি নিজের দোকানও আছে।” আর রাজনীতি? তাঁর কথায়, “২০১৩ সাল থেকে তৃণমূলের কর্মী হিসেবে কাজ করি। ২০১৮ সালে দল পঞ্চায়েত সমিতির টিকিট দেয়। মানুষের আশীর্বাদে ভোটে জিতি।’’

মাইনুলের উত্থান কি এতটাই সরলরেখায়? স্থানীয়দের দাবি, জমি দখল থেকে পুকুর ভরাটের মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তার পরেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারলেন না। কেন? স্থানীয়দের ওই অংশের দাবি, জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের হাত আছে তাঁর মাথার উপরে। অভিযোগ, বেশ কয়েক জন পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে মাইনুলের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

বিজেপির দক্ষিণ মালদহের সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ বলেন, “মানুষের টাকা লুট করে তৃণমূলের অনেক নেতা নিজেদের সম্পত্তি বাড়িয়েছেন।”

মাইনুল বললেন, “লকডাউনে পাঁচ লক্ষ টাকার চালই বিলি করেছি। ইদ উপলক্ষে নিয়ম করে পোশাক বিলি করছি। মানুষের টাকা লুটের কোনও প্রশ্নই নেই।” মাইনুলের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, “ব্যবসা করে কেউ বাড়ি বানাতেই পারেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন