ছ’বছর স্কুলে প়ড়াচ্ছেন। এ বার সেই সরকারি চাকরিতে নামতে চলেছে খাঁড়া। পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১ জন প্রাথমিক শিক্ষককে চিঠি ধরিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। কারণ হাইকোর্টের নির্দেশ।
এ মাসেই হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০০৬ সালের প্যানেল পুনর্বিন্যাস করতে হবে। ওই বছরের মেধা তালিকায় নাম ছিল না, এমন ১১ জন প্রার্থীকে চাকরি দিতে হবে। তাঁদের চাকরি দিতে গেলে চাকরিরত অন্য ১১ জন শিক্ষককে যদি কর্মচ্যূত করতে হয়ে, তাও করতে হবে।
তার ভিত্তিতেই এই নোটিস পাঠিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদের নোটিস পেয়ে চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন ওই শিক্ষকেরা। চাকরিরত ১১ জনকে নোটিস দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নারায়ণ সাঁতরা। তিনি বলেন, “ওই বছরের (২০০৬) মেধা তালিকার নীচের দিকে নাম থাকা ১১ জনকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে।” সম্প্রতি ওই শিক্ষকরা সংসদ সভাপতির সঙ্গে দেখাও করেন। চাকরি নিয়ে নিজেদের আশঙ্কা গোপন করছেন না তাঁরা। এক শিক্ষকের কথায়, “মেধা তালিকা তৈরির সময় কোনও ভুল হয়ে থাকলে তা তো সংসদের। আমাদের নয়। সেই ভুলের মাসুল আমাদের দিতে হবে কেন?” অপর এক শিক্ষক বলেন, “সরকার চাকরি দিয়েছে। ছ’বছর হয়ে গেল চাকরি করছি। এ ভাবে কাউকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় না। বলা হয়েছে, প্যানেলের নীচের দিকে আমাদের নাম ছিল। তাই নোটিস পাঠানো হয়েছে। অবশ্য এর সপক্ষে কোনও কাগজপত্র দেখানো হয়নি।”
এই শিক্ষকদের দাবি, নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাঁরা জবাব দেবেন। নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পুরনোদের এ ভাবে বাদ দেওয়া যায় না। তাই তাঁরা আইনি পরামর্শ নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন।
২০০৬ সালে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে পাঠানো নামের ভিত্তিতে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ২০০১ সালের নিয়ম মেনে পিটিটিআই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ২২ নম্বর দেওয়া হবে। ২০০৯ সালে পরীক্ষা এবং তারপরে প্যানেল তৈরি হয়। নিয়োগও হয়।
মেধা তালিকা তৈরির পরে অভিযোগ ওঠে, প্রশিক্ষণ থাকা সত্ত্বেও বেশ কয়েকজনকে ২২ নম্বর দেওয়া হয়নি। মেধা তালিকায় তাঁদের নাম ছিল না। এমন ১১ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁরা সকলেই পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। শুরুতে সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা চলে। সিঙ্গল বেঞ্চ ২০০৬ সালের প্যানেল পুনর্বিন্যাসের নির্দেশ দেয়। জানিয়ে দেয়, এই ১১ জনকে চাকরি দিতে হবে। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। ডিভিশন বেঞ্চও জানিয়ে দেয়, আগে এই ১১ জনকে চাকরি
দিতে হবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এক কর্তা বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ মানতে হলে হয় আরও বেশি শিক্ষক নিয়োগ করতে হত। নয়তো ২০০৬ সালের প্যানেল থেকে চাকরি পাওয়া কিছু প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করতে হত। বেশি শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব নয়। তাই দ্বিতীয় পদক্ষেপের দিকেই সংসদ এগোচ্ছে।” তার ভিত্তিতেই ২০০৬ সালের প্যানেলে নীচের দিকে থাকা ১১ জন শিক্ষকের নামের তালিকা তৈরি করা হয়।