বকেয়ার বোঝায় ধুঁকছে বিদ্যুৎ দফতর

বকেয়ার বোঝায় পঙ্গু বিদ্যুৎ দফতর! ২০১৪ সালের অগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের ১ লক্ষ ৬৪ হাজার গ্রাহকের বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের ৬টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের গ্রামীণ গ্রাহকদের (ডোমেস্টিক) ২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল মুলতুবি (লক) করার কথা ঘোষণা করা হয়।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০০:০১
Share:

বকেয়ার বোঝায় পঙ্গু বিদ্যুৎ দফতর!

Advertisement

২০১৪ সালের অগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের ১ লক্ষ ৬৪ হাজার গ্রাহকের বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের ৬টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের গ্রামীণ গ্রাহকদের (ডোমেস্টিক) ২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল মুলতুবি (লক) করার কথা ঘোষণা করা হয়। বকেয়া মোট বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। তার মধ্যে শুধুমাত্র গ্রামীণ (ডোমেস্টিক) গ্রাহকদের প্রায় ২০ কোটি ২২ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল মুলতুবি করা হয়। ঠিক হয়, ২০১৪ সালের অগস্ট মাস থেকে নতুন করে বিল পাঠানো শুরু হবে। সেই মতোই বিল পাঠানো শুরু হয়। ২০১৪ সালের অগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬৪ হাজার গ্রাহকের বিল হয় প্রায় ২২ কোটি টাকা। এর থেকে প্রথমে ৩ কোটি টাকা আদায় হয়। পরে দু’মাস ধরে শিবির করেও ৫১ লক্ষ টাকার বেশি আদায় করা যায়নি।

নিয়ম অনুযায়ী, বিল না মেটালে বিদ্যুত্‌ সংযোগ কেটে দেওয়ার কথা। তবে এখনই সে পথে হাঁটছে না বিদ্যুৎ দফতর। তবে গ্রাহকদের মনে ভীতি সঞ্চার করতে কিছু ক্ষেত্রে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য পদক্ষেপ করার জন্য বিদ্যুৎ দফতর উদ্যোগ নিলেও পুলিশের সাহায্য মিলছে না বলে অভিযোগ। বিদ্যুত্‌ দফতরের ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল রায়ের কথায়, “স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বেশিরভাগ মানুষই বিল তো মেটাচ্ছেনই না, এমনকি শিবির করে বিল আদায়ের চেষ্টা করেও ততটা সুফল মেলেনি।”

Advertisement

জেলা পরিষদের বিদ্যুত্‌ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির কথায়, “সাধারণ মানুষের যাতে অসুবিধে না হয়, তাই ৭ বছরের বিল ‘লক’ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যিনি যতটা বিদ্যুৎ খরচ করছেন, সেই অনুযায়ী বিল নেওয়া হচ্ছে, তবু অনেকে দিতে চাইছেন না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানুষকে বুঝিয়ে বিল আদায়ের চেষ্টা করছি। কিন্তু তাতেও বাগড়া দিচ্ছে সারা বাংলা বিদ্যুত্‌ গ্রাহক সমিতি। মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে বিল না দেওয়ার জন্য বোঝাচ্ছে!”

এ বিষয়ে ‘সারা বাংলা বিদ্যুত্‌ গ্রাহক সমিতি’-এর জেলা সম্পাদক জগন্নাথ দাসের কথায়, “আমরা মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছি না। বরং বিল দেওয়ার কথাই বলছি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘গরিব মানুষের যদি ১৮-২০ হাজার টাকা বিল আসে, তাহলে তিনি দেবেন কি করে? তাছাড়াও আগে যে বিল ‘লক’ করার কথা বলা হচ্ছে তা যে পরে ফের চাওয়া হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?’’ তাঁর দাবি, বিদ্যুৎ দফতর এই দু’টি বিষয় পরিষ্কার করে বলুক।

বিল আদায় না হওয়ায় দফতরের কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। বিদ্যুত্‌ দফতরের এক কর্তার কথায়, “যে টুকু বিল আদায় হয়েছে তার বেশিরভাগটাই আবার এসেছে শিল্প ও সেচ থেকে। সাধারণ গ্রাহকেরা কিছুতেই বিলের টাকা দিতে রাজি হচ্ছে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘ ৭ বছর বিল না দেওয়ায় বিল না মেটানোর অভ্যাস তৈরি হচ্ছে।”

বিদ্যুৎ বিল না মেটানোর কারণ কী? বেলপাহাড়ির বামুনডিহা গ্রামের দিলীপ মাহাতোর কথায়, “মজুর খেটে খাই। ঘরে দু’টি আলো ১টি পাখা। তিন মাসের বিল এসেছে ১৯৩২৪ টাকা। এটা কী দেওয়া যায়!” একইভাবে, জামবনির বীরেন্দ্রনাথ বেরার কথায়, “সামান্য জমি। বহু কষ্টে সংসার চলে। বাড়িতে ৩টি আলো ২টি পাখা চলে। তিন মাসের বিল এসেছে ২০ হাজার টাকা। তাই বিল ছাড়ের আবেদন জানিয়েছি।”

এত বেশি বিল আসার কারন কী? সমিতির অভিযোগ, নিয়ম মেনে রিডিং না নিয়েই বিল পাঠিয়ে দিচ্ছে দফতর। ফলে এমনটাই হচ্ছে। দফতরের দাবি, নিয়ম মেনেই বিল পাঠানো হয়েছে। তবু গ্রাহকেরা দিতে রাজি নন। বিদ্যুত্‌ দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, এরপরেও যদি বিল আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ না করা হয়, তাহলে বিল না দেওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে। তখন কিন্তু ঘোর বিপদ। রাজ্যের অন্য অনেক এলাকাও তখন এই পদ্ধতিতে হাঁটবে। রাজ্য জুড়েই বিদ্যুত্‌ পরিষেবা ভেঙে পড়বে। যাঁরা বিদ্যুত্‌ বিল দিচ্ছেন না, তাঁরাই কিন্তু মোবাইলের বিল দিচ্ছেন। বিদ্যুতের বেলায় যত আপত্তি।

বিল জমা না দিলে তো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কথা। তা হচ্ছে না কেন?

বিদ্যুত্‌ দফতরের অভিযোগ, এ ব্যাপারে পুলিশি সাহায্য মিলছে না। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে বাধা আসতে পারে। কারণ, বিল না দেওয়া গ্রাহকের সংখ্যাই যে বেশি। সেক্ষেত্রে পুলিশের সাহায্য প্রয়োজন। পুলিশের বক্তব্য, হঠাত্‌ বিদ্যুত্‌ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। তার দায় এসে পড়বে পুলিশের উপরে। কে সেই দায় নেবে? এক পুলিশ কর্তার কথায়, “এই সমস্যার কথা তো বিদ্যুত্‌ মন্ত্রীও জানেন। যদি কঠোর হওয়ার ব্যাপার থাকত, তাহলে তো উপরতলা থেকেই নির্দেশ আসত। তা যখন আসেনি তখন নিজে থেকে কেন ঝামেলায় জড়াতে যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন