রূপনারায়ণের গ্রাসে দক্ষিণচড়ার শঙ্করআড়া

জমি-বাড়ি হারিয়ে বিপন্ন ২৫টি পরিবার

তমলুক শহরের পূর্বদিকে স্টিমারঘাট-সহ সংলগ্ন উত্তরচড়া এবং  দক্ষিণচড়া এলাকায় রূপনারায়ণ নদীর ভাঙনে নদীর চরের চাষ জমি থেকে বসতভিটে সবই গিলে নিয়েছে রূপনারায়ণ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ০০:১৮
Share:

এ ভাবেই ভাঙনের গ্রাসে তলিয়ে যাচ্ছে বসতভিটে। দক্ষিণ চড়ার শঙ্করআড়ায়। নিজস্ব চিত্র

পঁয়তিরিশ বছরের ঘরসংসার ফেলে আসতে হয়েছে সন্ধ্যা জানাকে। ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছেন সন্ধ্যা জানার পরিবার। কারণ রূপনারায়ণের গ্রাসে চলে গিয়েছে ঘরবাড়ি। চারবছর আগের সেই স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি সন্ধ্যাদেবী।

Advertisement

তমলুক শহরের পূর্বদিকে স্টিমারঘাট-সহ সংলগ্ন উত্তরচড়া এবং দক্ষিণচড়া এলাকায় রূপনারায়ণ নদীর ভাঙনে নদীর চরের চাষ জমি থেকে বসতভিটে সবই গিলে নিয়েছে রূপনারায়ণ। চাষের জমি ও বসতবাড়ি হারিয়ে প্রায় ২৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে শঙ্করআড়া খালের বাঁধের ধারে। তবু ভাঙনের আতঙ্ক এখনও পিছু ছাড়েনি পরিবারগুলির। কারণ কয়েকব ছর আগে জেলা সেচ দফতর বোল্ডার দিয়ে নদীর তীর বাঁধিয়ে ভাঙন রোধের জন্য ব্যবস্থা নিলেও বাঁধানো নদী তীরের অনেকটাই ফের নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। ফলে শহরের ওই এলাকায় নদীর ধারে বসবাসকারী পরিবারগুলোর দিন কাটে আশঙ্কায়।

শহরের ষোলোফুকার গেট এলাকায় শঙ্করআড়া খালের দক্ষিণ দিকের বাঁধ ধরে এগোলেই চোখে পড়বে বাঁধের উপর সার সার ঘরবাড়ি। এক সময় এঁদের বেশিরভাগেরই ঘরবাড়ি ছিল নদীর চরে। ভাঙনের উদ্বাস্তু হয়ে এখন ঠাঁই হয়েছে বাঁধে। এই বাঁধের উপরেই ঘর সন্ধ্যা জানা, রাধানাথ সামন্ত, শক্তিপদ মান্নার। সন্ধ্যাদেবী বলেন, ‘‘নদীর চরে ৩৫ বছর ধরে বাস করেছিলাম। বছর চারেক আগে রূপনারায়ণের ভাঙনে চরের জমি-বাড়ি সব নদীগর্ভে চলে যায়। ছেলেমেয়ে পরিবার নিয়ে এখন বাঁধের উপরেই আশ্রয় নিয়েছি।’’ সাত জনের পরিবার চলে শ্রমিকের কাজ করে। কিন্তু এখানেও যে নিশ্চিন্তে নেই তা জানিয়ে সন্ধ্যাদেবী বলেন, ‘‘এখনও নদীর পাড় ভাঙছে। মাটি ধ সন্ধ্যাদেবীে ক্রমশ সরু হচ্ছে বাঁধ। কিন্তু কেউ দেখে না।’’ বাঁধের পাশে একচিলতে ঘর রাধানাথ সামন্তর। ভাঙনে জমিজিরেত হারিয়ে ৬ জনের পরিবার চলে ছোট চায়ের দোকানে আয়ে। রাধানাথবাবুর কথায়, ‘‘ভাঙন থেকে বাঁচতে বাঁধে উঠে এলেও এখানেও ভাঙনের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কারণ বছর চারেক আগে নদীর তীর বোল্ডার দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল। জলের তোড়ে তাও ধসে গিয়ে বিপজ্জনক অবস্থা। বর্ষায় বা ভরা কোটালে নদীর জল উপচে বাড়িতে ঢুকে যায়। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস ভয়ে ভয়ে কাটে।’’ তিনি জানান, এখানে রূপনারায়ণের ভাঙন রোধে জন্য পুরসভা ও সেচ দফতরের কাছে এলাকার লোকজন স্মারকলিপি দিয়েছে।

Advertisement

শহরের দক্ষিণ চড়া শঙ্করআড়া থেকে গঞ্জনারায়ণপুর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিধ্বংসী চেহারা নিয়েছে রূপনারায়ণ। রোজই একটু একটু করে পাড় ভাঙছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। সুভাষ মণ্ডল, শক্তিপদ মান্না বলেন, ‘‘বছর তিনেক আগে সেচ দফতর ভাঙন রোধে শহরের উত্তর ও দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকায় বোল্ডার, তারের জাল দিয়ে নদীর পাড় বাঁধানোর ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়ায় ওই কাজ ভালভাবে হয়নি। ফলে বাঁধানোর কয়েক মাস পরেই বেশ কিছুটা অংশে নদী তীরের একাংশ ধসে নদীগর্ভে চলে যায়। আমরা চাই এখানে স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিক সেচ দফতর।’’

শহরের নদীতীর এলাকায় ভাঙন যে বাড়ছে তা স্বীকার করেছেন তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন। তাঁর কথায়, ‘‘নদীর ভাঙন রোধে সেচ দফতর ও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের আর্থিক সাহায্যে কয়েক বছর আগে কাজ হয়েছে। তবে নদীর স্রোতের পরিবর্তনের জেরে কিছু এলাকায় ফের নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে।’’

জেলা সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার রঘুনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়ায় নদীতীরের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ওই এলাকায় পাকাপোক্ত ভাবে ভাঙন রোধের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন