নির্যাতিতাকে কলকাতায় স্থানান্তর

গণধর্ষণে গ্রেফতার ৪

ছাত্রীর পরিবারের দাবি, রবিবার ওই কিশোরের বাবাকে ডেকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বললেও তিনি রাজি না হয়ে টাকা নিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন। এরপরই নির্যাতিতার কাকিমা থানায় ওই কিশোরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই কিশোরই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। কারণ সেই-ই বাকি অভিযুক্তদের ঠিকানা বলে দেয়। আমরা চাই সমস্ত অভিযুক্তের চরম সাজা হোক।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫৪
Share:

এই বাড়ির পাঁচিলের ভিতরেই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মূল অভিযুক্ত ও তার বাবাকে ইতিমধ্যেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Advertisement

গ্রেফতার চারজনের মধ্যে তিনজনই প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের নাম বিশ্বজিৎ পাত্র, সমীর মণ্ডল ও সমীর দোলই। ধৃতেরা সকলেই কোলাঘাটের কাঁচরোল গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনায় অভিযুক্ত আরও এক জন পলাতক বলে দাবি পুলিশের। ঘটনার পর বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা নির্যাতিতাকে মঙ্গলবার রাতে তমলুক জেলা হাসপাতালে থেকে কলকাতার এসএসকেএমে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বুধবার ধৃত চারজনকে তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক অপ্রাপ্তবয়স্ককে হোমে পাঠানোর এবং বাকি তিনজনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে পাঁশকুড়ার চাপদা গ্রামের বাসিন্দা ও ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নাবালকের তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। স্কুলে খারাপ আচরণের জন্য গত বছর ওই কিশোরকে স্কুল থেকে ‘টিসি’ দেওয়া হয়। তার পর থেকে সে আর পড়াশোনা করত না বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, নির্যাতিতার পরিবার দরিদ্র। তুলনায় আর্থিক ভাবে সচ্ছল ওই কিশোরের পরিবার। ছাত্রীর পরিবার সূত্রে দাবি, সম্পর্কে নাছোড় ওই কিশোরের পীড়াপিড়িতে তারা প্রাপ্তবয়স্ক হলে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিয়েতে কিশোরের পরিবারেরও সায় ছিল বলে ছাত্রীর পরিবারের দাবি। সেই সুযোগে ওই ছাত্রীকে নিয়ে কিশোর প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেত। ছাত্রীটি যে মোবাইল ব্যবহার করত সেটিও ওই কিশোরই কিনে দিয়েছিল বলে দাবি প্রতিবেশীদের। তবে সম্প্রতি দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয় বলে প্রতিবেশীরা জানান।

Advertisement

গত ২৪ অগস্ট ওই ঘটনার চারদিন আগে ছাত্রীটি ওই কিশোরকে না জানিয়েই আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যায়। এতে ওই কিশোর চটে যায় বলে অভিযোগ। শনিবার ছাত্রীটি বাড়ি ফিরলে সেদিনই সন্ধ্যায় তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় সে।

স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, নির্যাতিতার বাড়ির অদূরেই ওই কিশোরের সঙ্গে নির্যাতিতার উত্তপ্ত কথা কাটাকাটিও হয় সেদিন। এরপরই ওই কিশোর ছাত্রীটিকে অন্যত্র যাওয়ার প্রস্তাব দেয় বলে অভিযোগ।

বাকডিহা গ্রামের কাছে গাছপালায় ঘেরা ফাঁকা রাস্তার ধারে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির পাঁচিলের পাশে অপেক্ষা করছিল আরও পাঁচ জন। ওই কিশোর ছাত্রীটিকে সেখানে নিয়ে গেলে তাকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ কিশোর ওই ছাত্রীকে তার বাড়ির কিছুটা দূরে পৌঁছে দিয়ে চলে যায়। বাড়ি ফিরে সাড়ে ৮ টা নাগাদ বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই ছাত্রী।

ছাত্রীর পরিবারের দাবি, রবিবার ওই কিশোরের বাবাকে ডেকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বললেও তিনি রাজি না হয়ে টাকা নিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন। এরপরই নির্যাতিতার কাকিমা থানায় ওই কিশোরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই কিশোরই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। কারণ সেই-ই বাকি অভিযুক্তদের ঠিকানা বলে দেয়। আমরা চাই সমস্ত অভিযুক্তের চরম সাজা হোক।’’

মঙ্গলবার কোলাঘাট থানায় অভিযোগের পর সেখানে আসেন জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসডিপিও (তমলুক) এবং সিআই। তাঁদের নেতৃত্বে আলাদা আলাদা টিম করে অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়। পাঁশকুড়া থানার পুলিশ পৌঁছে যায় চাপদা এলাকায়। মঙ্গলবারই রাত ৯ টা নাগাদ কোলাঘাটের কিশোরচক গ্রামের একটি বাড়ি থেকে মূল অভিযুক্ত ও তার বাবাকে আটক করে পুলিশ। কিশোরকে জেরা করে রাতেই কোলাঘাটের কাঁচরোল থেকে বাকি চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই কিশোরকে এখনও গ্রেফতার না করা নিয়ে কোলাঘাট থানার ওসি কাশীনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই কিশোর দাবি করেছে সে ঘটনায় জড়িত নয়। বাকিদের সে চেনে না। তাদের দু’জনকে দেখতে পেয়ে ওই পাঁচ যুবক মেয়েটির ওপর অত্যাচার করে।’’ যদিও পুলিশের দাবি, ওই কিশোর ঘটনায় জড়িত না থাকলে সে কী ভাবে বাকি অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা জানল ? ব্যর্থ প্রেমের প্রতিশোধ নিতেই কি ওই কিশোর বাকিদের সাহায্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে? অন্যদিকে ধৃতদের দাবি, ওই কিশোর এবং ওই ছাত্রী তাদের এলাকায় লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করত। দু’জনকে ধরে ফেলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে। তবে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের সবাইকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং এলাকায় মদ গাঁজা সহ সমস্ত রকম মাদকদ্রব্যের রমরমা বন্ধের দাবিতে বুধবার সারা ভারত মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির পক্ষ থেকে কোলাঘাট থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন