ভূগোল ক্লাসে তার চোখে জল দেখে শিক্ষক কারণ জিজ্ঞাসা করতেই হাউ হাউ করে কেঁদে উঠেছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীটি। কাঁদতে কাঁদতেই বলেছিল, ‘‘স্যর, আমাকে বাঁচান। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। কিন্তু বাবা-মা আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।’’ ছাত্রীর আর্তি শুনে আর সময় নষ্ট করেননি শিক্ষক। তাকে ও অন্য শিক্ষকদের নিয়ে সটান হাজির হন থানায়। স্কুলের পক্ষ থেকে থানায় জেতে পাঠানো হয় মেয়েটিন বাবা-মাকে। সেখানে পুলিশের সামনে তাঁরা মুচলেকা দেন, মেয়ে সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তার বিয়ে দেবেন না। বুধবার পটাশপুর হাড়োচরণ স্কুলের ঘটনা।
পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পটাশপুর থানার অদূরেই তুপচিবাড় গ্রাম। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পূজা ধাড়া। বাবার ফলের দোকান। মা বাড়ির হেঁশেল সামলান। দুই ছেলেমেয়ে মধ্যে বড় পূজাই। ছেলে অঙ্গনওয়াড়িতে পড়াশোনা করে। অভাবের সংসারে মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করে দিয়েছিলেন ঠাকুরমা এবং বাবা-মা। বেলদায় ফল ব্যবসায়ী পাত্রও মিলে যায়। গত শুক্রবার মেয়েকে নিয়ে বেলদার ঠাকুরচকে গোপনে পাত্রও দেখিয়ে আনেন বাবা-মা। তারপরেই বিয়ে বেঁকে বসে পূজা। আরও পড়াশোনা করবে বলে বাবা-মাকে জানিয়ে বিয়ের তোড়জোড় করতে বারণ করে। কিন্তু লাভ হয়নি। উল্টে মেয়ের এমন ‘বেয়াদপি’ সহ্য করতে না পেরে মারধর এমনকী বইপত্র আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। নিরুপায় মেয়েটি প্রতিবেশীদের সব জানালেও কেউ তার ডাকে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ।
পূজার কথায়, ‘‘মা বাবা গোপনে জোর করে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। তাই স্কুলের শিক্ষকদের সব জানিয়েছিলাম। আমি পড়তে চাই।’’ প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মকসেদ আলি খান বলেন, ‘‘স্কুলে প্রার্থনার শেষে প্রতিদিন ছেলে মেয়েদের বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতন করা হয়। সেই সাহস থেকে আজ ওই ছাত্রী আমাদের কাছে তার সমস্যা জানিয়েছে। আমরা সময়মতো ব্যবস্থা নিয়ে তার বিয়ে আটকাতে পেরেছি। আগামী দিনে এই সচেতনতা আরও বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেব।’’
নাবালিকা বিয়ে দেওয়া যে অপরাধ তা স্মরণ করিয়ে দিলে পূজার বাবা বলেন, ‘‘আমি ভুল করে স্ত্রীর এবং মায়ের কথায় মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। প্রতিজ্ঞা করছি, মেয়ে সাবালক ও স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেব না।’’
পটাশপুর-২ এর বিডিও মধুমালা নন্দী বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সচেতনতার জায়গায় কিছুটা খামতি থেকেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে মেয়েটি খুব সচেতন। বাল্যবিবাহ রোধে আগামী দিনে আরও বেশি করে প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে।’’