বিপজ্জনক: রেললাইনে নিজস্বী। মেদিনীপুরে। —ফাইল চিত্র।
সে দিন কংসাবতী রেলসেতু পেরিয়েই আচমকা থমকে গিয়েছিল খড়্গপুর-আদ্রা লোকাল।
তখনও বিকেলের আলো নেভেনি। ট্রেনের গতিরুদ্ধ হওয়ায় যাত্রীরা অবাক। দেখা গেল, ইঞ্জিনের কয়েক ফুট সামনে তিন কিশোর নিজস্বী তোলায় মত্ত!
চালকের তৎপরতায় সে যাত্রায় প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল তিন কিশোরেরই। কিন্তু রেলেরই একটি সূত্রের খবর, চলন্ত ট্রেনের সামনে নিজস্বী তোলার প্রবণতা বাড়ছে। এবং তাতে কিছু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাও এড়ানো যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার লিলুয়ার কাছে নিজস্বী তুলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গিয়েছে তিন যুবক। বছর দেড়েক আগে কল্যাণী শিল্পাঞ্চল স্টেশনের সামনে একই ভাবে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল। গত মাসে পূর্ব দিল্লিতে মারা যায় দুই কিশোর।
সমস্যা মানছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ। তিনি বলেন, “মানুষ সচেতন না-হলে এই বিপজ্জনক প্রবণতা ঠেকানো মুশকিল।’’ সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার কাজটা তারা ইতিমধ্যেই শুরু করেছে বলে জানিয়েছে রেল।
একে কানে মোবাইল নিয়ে পথ চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শেষ নেই। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থান-কাল বিবেচনা না করে নিজস্বী তোলার বিপজ্জনক প্রবণতা। যেখানে-সেখানে যখন-তখন দাঁড়িয়ে স্মার্টফোনে ছবি তুললেই হল! জীবনের ঝুঁকি থাকলেও কুছ পরোয়া নেহি। তার পরে সেই ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়েই তৃপ্তি! সঞ্জয় কুণ্ডু নামে মেদিনীপুরের এক ট্রেনযাত্রী মনে করেন, ‘‘নিজস্বী নিয়ে বাড়াবাড়ি বন্ধ করতে আরও বেশি সচেতনতামূলক প্রচার চালানো উচিত।’’ প্রিয়াঙ্কি চন্দ্র নামে আর এক যাত্রীও বলেন, ‘‘সচেতনতাই পারে এই সমস্যা দূর করতে।”
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক কর্তা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে সচেতনতামূলক প্রচারে জোর দেওয়া হবে। স্টেশনে সতর্কবার্তা লেখা বোর্ড টাঙানোর কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজ কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রেলকর্তাদেরই একাংশ। তাঁদের মতে, সতর্কবার্তাকে প্রায় কেউই পাত্তা দেন না। আর সতর্কবার্তায় রেললাইনে যদি বা বন্ধ হয়, ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার ধারে, খাদের ধারে, ঝর্নার কোলে বা মত্ত হাতির সামনে কি নিজস্বী তোলা বন্ধ হবে— সেই প্রশ্ন থাকছেই।