হাসপাতাল চত্বরে পড়ে খারাপ অ্যাম্বুল্যান্স। — নিজস্ব চিত্র।
বিকেল ৫টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত রোগী অসুস্থ হলে মিলবে না অ্যাম্বুল্যান্স।
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স রোগী নিয়ে যাওয়া-আসার কাজ করবে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে।
হাসপাতালের দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে একটি খারাপ। সবেধন নীলমণি একটি অ্যাম্বুল্যান্সও চলে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। অন্য সময় রোগী হাসপাতালে নিয়ে যেতে ভাড়া করতে হয় গাড়ি।
দিন কয়েক আগেই হাসপাতালের একমাত্র সচল অ্যাম্বুল্যান্স সারাদিন রোগী নিয়ে যাওয়া-আসার কাজ করত। যদিও সেই অ্যাম্বুল্যান্সও চলছে অস্থায়ী চালক দিয়ে। তবে নতুন বিজ্ঞপ্তির জেরে টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করে রোগীকে হাসপাতালে আনতে সমস্যায় পড়ছেন গরিব মানুষেরা। এমনকী রোগীকে অন্যত্র রেফার করা হলেও গাড়ি ভাড়া করতে কালঘাম ছোটে।
খড়্গপুর মহকুমার ১০টি ব্লক এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী নানা কারণে হাসপাতালে আসেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতাল থেকে অন্যত্র রোগী রেফার করা হলে এতদিন অ্যাম্বুল্যান্সের টাকা দিতেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও দীর্ঘ দিন একটি অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ হয়ে রয়েছে। মেরামতি করা হয়নি। একটি অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েই এতদিন রোগী নিয়ে যাওয়া-আসার কাজ চলছিল। যদিও দূরদূরান্ত থেকে রোগীকে নিয়ে আসতে সময় লাগায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন বাকিরা। পরিস্থিতি দেখে একটি ভাড়া গাড়িকে রোগী পরিবহণের দায়িত্ব দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ভাড়া গাড়ির ব্যয়ভার সামলানো ক্রমশ মুশকিল হয়ে পড়ছিল। তাই ওই পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে একটি অ্যাম্বুল্যান্সেরও সময় বেঁধে দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। অভিয়োগ, সন্ধের পর থেকে আর অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না। রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যেতে গিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন পরিজনেরা। হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের হাসপাতালে এখন একটি অ্যাম্বুল্যান্স। সেই অ্যাম্বুল্যান্স একজন অস্থায়ী চালক দিয়ে চালানো হয়। তাই সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালানো হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।”
যদিও এই বিজ্ঞপ্তির জেরে ক্ষোভ বাড়ছে রোগীর পরিজনেদের। তাঁদের অভিযোগ, মাঝরাতে যদি হাসপাতালের কোনও রোগীকে রেফার করা হয়। তখন তাঁকে কী ভাবে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হবে। রোগীর কিছু হয়ে গেলে তার দায় কে নেবে। এ ছাড়াও ভাড়া গাড়িগুলিও সুযোগ বুঝে চড়া দর হাঁকায়। এত টাকা দেওয়া অনেকের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। শুধু রোগী রেফার নয়, কোথাও কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটলে তখনও অ্যাম্বুল্যান্সের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ নিয়ে সুপার কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে রোগী কল্যাণ সমিতির টাকায় জখমদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে বলে ঠিক হয়েছে।”
খড়্গপুর গ্রামীণের বেনাপুরের বাসিন্দা জ্যোতিন্দ্রনাথ দাসের অভিযোগ, “গরিব মানুষের পক্ষে ভাড়া গাড়িতে হাসপাতাল থেকে রোগীকে মেদিনীপুরে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। হাসপাতালের এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে।” ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন’-এর খড়্গপুর হাসপাতাল শাখার উপদেষ্টা দিলীপ সরখেল বলেন, “হাসপাতালে এ ভাবে একটি অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ হয়ে থাকায় সমস্যা ছিলই। এ বার সময় বেঁধে দেওয়ায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ নিয়ে আগেই সুপারকে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। আমাদের দাবি, দ্রুত সমস্যা মেটানোর জন্য একজন স্থায়ী চালক নিয়োগ করা হোক।”
২৬ অগস্ট রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে। মহকুমাশাসক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির পরিচালন সমিতির সহ-সভাপতি সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “সমিতির বৈঠকে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। অ্যাম্বুল্যান্সের সময় নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা পুনর্বিবেচনা করা হবে।”