সংক্রমণের আশঙ্কা স্কুলেই, পার্থের ‘স্ত্রীরোগ’ মন্তব্যে ঝড়

নরক শৌচাগার, ভয়ে জল খায় না ছাত্রীরা

বৃহস্পতিবার নজরুল মঞ্চে তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির এক অনুষ্ঠানে শিক্ষক- শিক্ষিকাদের বদলি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানান, মেয়েরা এত বেশি স্ত্রীরোগে ভুগছেন যে, তিনি রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০০:০২
Share:

ঘাটালের একটি স্কুলের শৌচাগার। নিজস্ব চিত্র

স্ত্রীরোগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে সরগরম জেলার শিক্ষামহল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার নজরুল মঞ্চে তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির এক অনুষ্ঠানে শিক্ষক- শিক্ষিকাদের বদলি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানান, মেয়েরা এত বেশি স্ত্রীরোগে ভুগছেন যে, তিনি রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ওই দিন প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানান, কোনও অসুস্থ ব্যক্তি বদলির আবেদন করলে সেটা অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে একবার বলেছিলেন তিনি। এরপরই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তারপর থেকে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে শিক্ষিকারা এত বেশি স্ত্রীরোগে ভুগছেন যে, আমি নিজেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। এটা কী হচ্ছে? জেনুইন থাকলে নিশ্চয়ই হবে।’’ তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, কোনও প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন কী করে! যদিও শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফেসবুকে দাবি করেছেন যে তার বক্তব্যের অপব্যাখা করা হচ্ছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশের মতে, স্ত্রীরোগ নিয়ে প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য না করলেই পারতেন শিক্ষামন্ত্রী। এই ধরণের মন্তব্য মহিলাদের ক্ষেত্রে অবমাননাকরও। জেলার শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, জেলার স্কুলে অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং অব্যবস্থাই সমস্যার মূলে। তাঁদের অভিযোগ, নির্মল বাংলা নিয়ে সচেতনতা প্রচার চললেও বেশিরভাগ স্কুলের শৌচালয় ব্যবহারের অনুপযুক্ত। সেগুলি পরিষ্কারের উদ্যোগ দেখা যায় না। শৌচাগার ব্যবহার করে সংক্রমণেও আক্রান্ত হন কেউ কেউ। অনেক শিক্ষিকাকে আবার বাড়ি থেকে অনেকটা দূরের স্কুলে যেতে হয়। রোজ অনেকটা পথ যাতায়াতে মাঝেমধ্যে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে।

Advertisement

সম্প্রতি কয়েকটি স্কুলে পরিদর্শন গিয়ে এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের একাংশ আধিকারিকদেরও এই বিষয়টি নজরে এসেছে। পরিস্থিতি দেখে জেলার সব স্কুলকে এক নির্দেশিকা পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। যেখানে জানানো হয়েছে, স্কুল চত্বর এবং স্কুলের শৌচাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতেই হবে। প্রয়োজনে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে সাফাইয়ের করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত সহযোগিতা করবে।

শালবনির এক স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর ক্ষোভ, ‘‘ভয়ে স্কুলে এসে জল খাই না। কারণ জল খেলে শৌচালয়ে যেতে হবে বলে। সেখানে এত দুর্গন্ধ আর নোংরা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।’’ আরেক এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘মাঝে মাঝে বাধ্য হয়েই অপরিস্কার শৌচালয়ই ব্যবহার করতে হয়।’’ তুলনায় ভিন্ন মত মেদিনীপুর সদর ব্লকের মহারাজপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা সোমা ধরের। তিনি বলেন, ‘‘এক সময়ে স্কুলে মেয়েদের শৌচালয়ই ছিল না। পরে হয়েছে। এখন মোটের উপর শৌচালয় পরিস্কার থাকে। তবে পরিষ্কারের দিকে আরও নজর দিলে ভাল হয়।’’

জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারঙ্গী মানছেন, ‘‘স্কুলের শৌচালয় কিংবা স্কুল ক্যাম্পাস অপরিষ্কার থাকলে নানা রোগ হতে পারে। বিশেষ করে মেয়েদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ব্যাপারে স্কুলগুলিকে আরও সচেতন হতে হবে।’’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরার আশ্বাস, ‘‘স্কুল চত্বর পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement