জলোচ্ছ্বাসে ছিঁড়ে ঢেউ মাপার যন্ত্র উঠল জালে

শুক্রবার প্রবল ঢেউয়ের ফলে দিঘা ও শঙ্করপুরের মাঝামাঝি এলাকায় বসানো যন্ত্রটির নোঙর ছিঁড়ে গিয়ে ভাসতে ভাসতে চলে আসে মন্দারমণির কাছে নিউ জলধা মৎস্যখটির দিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৮:২০
Share:

মৎস্যজীবীদের হেফাজতে ‘ওয়েভ রাইডার বয়’। নিজস্ব চিত্র

সমুদ্রসৈকতে ঢেউয়ের গতিপ্রকৃতি মাপার কাজ করে ‘ওয়েভ রাইডার বয়’ নামে একটি যন্ত্র। খোদ সেই যন্ত্রই ভেসে গেল সমুদ্রের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে।

Advertisement

শুক্রবার প্রবল ঢেউয়ের ফলে দিঘা ও শঙ্করপুরের মাঝামাঝি এলাকায় বসানো যন্ত্রটির নোঙর ছিঁড়ে গিয়ে ভাসতে ভাসতে চলে আসে মন্দারমণির কাছে নিউ জলধা মৎস্যখটির দিকে। শেখ আখতার নামে এক মৎস্যজীবীর জালে সেটি জড়িয়ে যায়। উদ্ধার করে যন্ত্রটি খটিতেই রেখেছেন মৎস্যজীবীরা।

তবে শুক্রবার থেকে যন্ত্রটা নিয়ে বেজায় বিপদে পড়েছেন নিউ জলধা খটির মৎস্যজীবীরা। খটির সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ জানার কথায়, “সারা রাত এই দামি যন্ত্রটি পাহারা দিয়েছি আমরা। এটা আমাদেরই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, বার্তা পাওয়া যায় সমুদ্র সম্পর্কে। পুলিশ, মৎস্য দফতর, বিডিও অফিসে খবর দেওয়া হলেও কেউ আসেনি।”

Advertisement

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ‘সুনামি অ্যান্ড হাই ওয়েভ ওয়ার্নিং ইউনিট’টি বসিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের অনুমোদিত সংস্থা ‘ইনকইস’। খরচ হয়েছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। দিঘা উপকূল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে, যেখানে সমুদ্রের গভীরতা ১০ মিটার, সেখানেই জলের উপর ২০০ কিলোগ্রাম ওজনের, পাঁচ ফুট ব্যাসের গোলাকার বয়টি ভেসে থাকত। যাতে এটি ভেসে না যায়, সে জন্য সমুদ্রের তলায় বড় কংক্রিটের নির্মাণের সঙ্গে নোঙর দিয়ে বাঁধাও ছিল। ‘ওয়েব রাইডার বয়’-এর রয়েছে দু’টি অ্যান্টেনা। একটি বেতার তরঙ্গের সঙ্গে এবং আর একটি কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে যুক্ত থাকত। এর মাধ্যমে সাংকেতিক বার্তা পৌঁছে যেত ইনকইস-এর সদর দফতর হায়দরাবাদে। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েক জন মৎস্যজীবীর মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করা হয়েছিল এই পদ্ধতির সঙ্গে। প্রতি দিন বিকেল ৪টে থেকে ৫টার মধ্যে সেই নম্বরগুলোতে বাংলা ভাষায় সমুদ্রের পরিস্থিতি সম্পর্কিত বার্তা পৌঁছে যেত। সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা, গতিমুখ, বাতাসের গতিবেগ, জলের তাপমাত্রা, সুনামি বা জলোচ্ছাসের সম্ভাবনা এবং সমুদ্রের তলার মাটির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে যন্ত্রটি।

দিঘার কাছে বসানো যন্ত্রটির কাজকর্ম এবং হায়দরাবাদের ইনকইস সংস্থার মধ্যে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন কলকাতার গড়িয়াহাটের বাসন্তী দেবী কলেজের অধ্যাপিকা মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বয়টি উপকূলে চলে আসায় বিশেষ ক্ষতি হবে না। ওড়িশার পারাদ্বীপে এমন একটি বয় রয়েছে। সেখানে থেকে তথ্য সংগ্রহ করেই আপাতত কাজ চলবে। দিন দশেকের মধ্যে যন্ত্রটি ফের বসানো হবে।”

শনিবার দুপুরে সেখান যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক গৌতম সেন। গোড়া থেকই এই ইউনিটের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। গৌতমবাবুর কথায়, “এই নিয়ে তৃতীয় বার বয়টি ছিঁড়ে গেল। প্রথম বার কর্ড কেটে গিয়েছিল ট্রলারের ধাক্কায়। দ্বিতীয় বার মৎস্যজীবীদের জালে জড়িয়ে। এ বারের সমস্যাটা আরও জটিল। সমুদ্রের নীচে প্রচুর পলি জমেছে। সেই পলির স্তর জলোচ্ছ্বাসের ফলে সরতে থাকে। তখন পলির স্তর বয়-এর নোঙরে ধাক্কা দেয়, ছিঁড়ে যায় সেটি।” দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের সহযোগিতায় দিঘায় একটি ‘শোর স্টেশন’ রয়েছে। স্থানীয় ভাবে এখান থেকেই ইউনিট পরিচালনা করা হয়। সেখানেই এ দিন বয়টিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখানে কিছুটা মেরামতির পর তা ফের সমুদ্রে ভাসানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন