গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ব্লক অফিসে চোখ টানছে একটা বিজ্ঞপ্তি। সেখানে লেখা—‘সরকারি অফিস আপনার অফিস। দয়া করে জুতো খুলে প্রবেশ করবেন না’।
অধিকাংশ ব্লক অফিসে প্রায়ই চোখে প়ড়ে একটা দৃশ্য। বিভিন্ন কাজে আসছেন মানুষ। তাঁদের অনেকেই অফিসে ঢোকার আগে বাইরে খুলে রাখছেন জুতো। বছরের পর বছর ধরে চলছে এই ট্র্যাডিশন। এ বার অন্য পথে হাঁটলেন চন্দ্রকোনা-২ এর বিডিও শাশ্বত প্রকাশ লাহিড়ী। তিনি বললেন, প্রায়ই দেখতাম এলাকার কেউ কেউ জুতো খুলে অফিসে ঢুকছেন। এটা দেখে খুব অস্বস্তি হত। তাছাড়া এটা সরকারি অফিস। যে কোনও সুবিধা-অসুবিধায় যে কেউ আসতেই পারেন। সেখানে জুতো খুলবেন কেন।”
সরকারি অফিস হোক বা পঞ্চায়েত অফিস। এখনও শহর থেকে গ্রামের নানা দফতরে এলে আমজনতার মধ্যে ভয়-ভীতি কাজ করে। অফিসে ঢোকার সময় ইতস্তত করা থেকে জুতো খুলে অফিসের চৌকাঠ পেরোনো-এমনই সব প্রবণতা কাজ করে। এখন সরকারি অফিসে কাজের চাপ বেড়েছে। নানা কাজে পঞ্চায়েত ছাড়াও বিডিও অফিসে ছুটতে হয়। একাধিক বিডির-র সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁরা দিনে অন্তত ৫০-৬০ জনের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের একটা বড় অংশেরই গ্রামে বাড়ি।
কেউ চাষের কাজ করেন। কেউ বা দিনমজুর। কালেভদ্রে বিডিও অফিস আসার ফলে মনের ভয় যায় না। সরকারি অফিস যে তাঁর হকের জায়গা, কোনও মন্দির নয় সেটা ভুলে যান অনেকে। সে দিক থেকে চন্দ্রকোনা-২ বিডিও-র উদ্যোগ ব্যতিক্রমী। এই বিজ্ঞপ্তি শুধু জুতো খুলে অফিসে ঢোকার নয়। অন্য উদ্দেশ্যও আছে। বাস্তবে দেখা যায়, অনেকেই বিডিও-র কাছে পৌঁছনোর আগেই সাধারণ কর্মীরা কিছু বুঝিয়ে ফিরিয়ে দেয়। তাই শাশ্বতপ্রকাশবাবু অফিসের বাইরে বড় বড় অক্ষরে লিখে দিয়েছেন, ‘বিডিও-র সহিত দেখা করার জন্য কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
একসময় একই সমস্যা ছিল পুলিশের ক্ষেত্রে। খেলাধূলো-সহ নানা রকম জনসংযোগ করে সেই প্রবণতা ঠেকানো গিয়েছে। এখন গ্রামের মানুষ নানা সমস্যায় নিজেরাই পুলিশের দ্বারস্থ হয়। এমনকী, থানার বড়বাবু থেকে পুলিশের পদস্থ আধিকারিকদের মোবাইল নম্বরও গ্রামে গ্রামে ঘুরছে। কিন্তু প্রশাসনিক দফতর গুলিতে সেই প্রবণতা কাটেনি। বিডিও-র এমন পদক্ষেপকে তাই স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই।