এ যেন উলটপুরাণ!
বছর কয়েক আগেও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত বেসরকারি বিএড কলেজগুলিতে আসনের থেকে ঢের বেশি ভর্তির আবেদনপত্র জমা পড়ত। একাংশ কলেজ মেধা তালিকার বাইরে থেকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নিত বলেও অভিযোগ। বদলে বাড়তি ভর্তি ‘ফি’ নিত। এ বার ছবিটা একেবারে উল্টো! যত আসন সংখ্যা, আবেদন এসেছে তার থেকে কম। ভর্তি হয়েছে আরও কম।
আসন ভরাতে বাধ্য হয়ে বিএড কলেজগুলিতে ফের কাউন্সেলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। আজ, শুক্রবার দ্বিতীয় পর্যায়ের কাউন্সেলিং হবে। এ দিন থেকে ফের ভর্তির আবেদন জমা নেওয়াও শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা বলেন, “পড়ুয়া নেই। বহু আসন ফাঁকা। বিএড কলেজগুলো সমস্যায় পড়ছে। তাই ফের ফর্মফিলাপের সিদ্ধান্ত।”
প্রচুর আসন যে ফাঁকা রয়েছে তা মানছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক সুনীলচন্দ্র মল্লিক। তাঁর কথায়, “কাউন্সেলিং শেষে অনেক আসনই ফাঁকা রয়েছে। এ বার ভর্তির আবেদনও কম এসেছিল।” কেন এই পরিস্থিতি? সুনীলচন্দ্রবাবুর মতে, “এ বার কলেজের সংখ্যা বেড়েছে। তাই হয়তো এই পরিস্থিতি!”
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৪৯টি বিএড কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিএড কলেজ ৬টি। বাকি ৪৯টি বেসরকারি বিএড কলেজে মোট আসন সংখ্যা ৪,২০০টি। বিএডে ভর্তির জন্য প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় গত ১২ এপ্রিল। এ বার ভর্তি হতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন ৩,৩০৬ জন। প্রথম পর্যায়ের কাউন্সেলিং হয় ৮-১৩ জুন পর্যন্ত। আবেদনকারীদের মধ্যে কাউন্সেলিংয়ে এসেছিলেন ১,৪৮২ জন। ওই কাউন্সেলিংয়ের পর দেখা যায়, বিএড কলেজগুলিতে অর্ধেকেরও বেশি প্রায় ২,৭০০ আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে! বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সূত্রে খবর, গত বছরও আবেদনকারীর সংখ্যা চার হাজারের বেশি ছিল। এ বার সেখানে আবেদনকারীর সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গোটা দেশে স্কুল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের নীতি-নির্ধারক সংস্থা ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন’ (এনসিটিই)-এর নিয়ম অনুসারে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকতার জন্য বিএড ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। তবে, প্রাথমিক বা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকতার জন্যে বিএড বাধ্যতামূলক নয়।
তারপরেও কেন বিএডে অনীহা?
বিএড কলেজে আসন ফাঁকা থাকা নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। অধিকাংশেরই মত, দীর্ঘদিন স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়ে ডামাডোল চলছে। নিয়োগ বন্ধ থাকায় এত টাকা খরচ করে বিএড পড়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন পড়ুয়ারা। বেলদা গঙ্গাধর একাডেমির প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল শীট মানছেন, “বিএডে প্রচুর আসন ফাঁকা রয়েছে বলে শুনেছি। স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) পরীক্ষা না হওয়া এর একটা কারণ হতে পারে।” মেদিনীপুরের মাতকাতপুরের এক বিএড কলেজের প্রশাসনিক আধিকারিক আরণ্যক আচার্য্যও একমত, “২০১২ সালের পরে এসএসসি হয়নি। এসএসসি হলে বিএড করার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ থাকত।”
বিএডে পড়ুয়াদের অনীহা প্রসঙ্গে অনেকের আবার মত, এখন ভিন্ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহজেই বিএড করার সুযোগ রয়েছে। ৬০- ৬৫ হাজার টাকা খরচ করলেই এই কোর্স করা যায়। সেখানে বেসরকারি কলেজ থেকে দু’বছরের এই কোর্সের জন্য রাজ্যে সরকার নির্ধারিত ফি দেড় লক্ষ টাকা। এক সময় বেসরকারি কলেজগুলো খেয়াল খুশি মতো ভর্তির ফি নিয়েছে। ফলে, ভিন্ রাজ্য থেকে পড়ুয়াদের বিএড করার প্রবণতা বাড়ছে। স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ এক পড়ুয়া সুব্রত চক্রবর্তীর কথায়, “বিএড করা তো শিক্ষকতার চাকরির জন্যই। গত চার বছর এসএসসি হয়নি। বিএড করে হবেটা কী!”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, দ্বিতীয় দফার ফর্ম পূরণ চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। মেধাতালিকা প্রকাশ হবে আগামী ৫ জুলাই। পরে ফের কাউন্সেলিং হবে। যদিও তারপরেও আসন পূরণ কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা বলেন, “পড়ুয়াদের তেমন উৎসাহ নেই। ফলে, ফের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও সঙ্কট কতটা কাটবে সেই নিয়ে সংশয় থাকছেই। দেখা যাক এ বার কী হয়!”