বেলপাহাড়ি নিরাপদ, রাত কাটিয়ে বার্তা মুকুলের

এক সময়ের মাওবাদী ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়িতে রাত্রিযাপন করে এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন মুকুল রায়! রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ব্যক্তিগত সফরে এসে এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলীয় নেত্রীর নিরাপদ জঙ্গলমহলের দাবিকে মান্যতা দিলেন মুকুলবাবু।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৬
Share:

সোমবার সকালে বাঁকুড়ায় যাওয়ার পথে মুকুল।

এক সময়ের মাওবাদী ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়িতে রাত্রিযাপন করে এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন মুকুল রায়!

Advertisement

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ব্যক্তিগত সফরে এসে এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলীয় নেত্রীর নিরাপদ জঙ্গলমহলের দাবিকে মান্যতা দিলেন মুকুলবাবু। পক্ষান্তরে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দিলেন, নিরাপত্তার ঢালাও আয়োজন ছাড়াও তিনি ঝুঁকি নিতে জানেন।

মুকুলবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, রবিবার কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার সময়ই বেলপাহাড়িতে রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ছিলেন মুকুলবাবু। দলীয় সূত্রের খবর, রবিবার সকালেই মুকুলবাবুর একান্ত সচিবের মাধ্যমে বেলপাহাড়ি ব্লক প্রশাসনের কাছে দু’টি সরকারি অতিথিশালার তিনটি ঘরের বুকিং চাওয়া হয়। সকালেই ঝাড়পোঁছ করে অতিথিশালা তৈরি করে রাখা হয়।

Advertisement

মুকুলবাবু অবশ্য সোমবার বেলপাহাড়ি ছাড়ার আগে হাসি মুখে স্মরণ করিয়ে দিয়ে যান, তিনি প্রথম নন। ’৯৩ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেলপাহাড়ির ফরেস্ট বাংলোতে রাত্রিযাপন করেছিলেন। মুকুলবাবুর কথায়, “এটা নতুন কিছু নয়। তবে গত কয়েক বছরের নিরিখে বলতে পারেন, জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। রাত দশটায় মনে হচ্ছে সন্ধে ৬টা। সাড়ে চার বছর এটা ভাবাই যেত না। এখন প্রচুর পর্যটক আসছেন। এর পুরো কৃতিত্বটাই মুখ্যমন্ত্রীর।”

নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় মমতা যখন বেলপাহাড়িতে এসেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। ওই সময় মমতার সফরসঙ্গী ছিলেন বেলপাহাড়ির কংগ্রেস সুব্রত ভট্টাচার্য, ঝাড়গ্রামের কংগ্রেস নেতা নিখিল মাইতিরা। সুব্রতবাবুদের কথায়, “বাইশ বছর আগে মমতা যখন বেলপাহাড়িতে রাত্রিযাপন করেছিলেন, তখন বেলপাহাড়ি শান্ত ছিল। তখনও নকশালপন্থীদের আত্মপ্রকাশ ঘটেনি।”

পড়ুন : যে পথে মুকুলের মন্দির দর্শন

বস্তুতপক্ষে, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেলপাহাড়িতে অভূতপূর্ব নিরাপত্তার মাঝে প্রশাসনিক সভা করেছেন। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী হিসেবে কিংবা মুখ্যমন্ত্রী মমতা কখনও বেলপাহাড়িতে রাত্রিযাপন করেননি। জঙ্গলমহলে মমতার সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী-সহ রাজ্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউই কোনও দিন বেলপাহাড়িতে রাত্রিযাপনের কথা ভাবেননি। সেই দিক থেকে মুকুলবাবুর এমন সিদ্ধান্ত যে রীতিমতো রাজনৈতিক অঙ্কপ্রসূত, তা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না তাঁর অনুগামীদের।

রবিবার বিকেলে চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরে নেত্রী মমতার নামে পুজো দিয়ে সটান বেলপাহাড়িতে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন মুকুল। ঠিক ছিল বেলপাহাড়ির গাডরাসিনি পাহাড়ের উপর একটি মন্দিরে পুজো দেবেন। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় এবং ওই মন্দিরে পৌঁছতে অনেকটা পাহাড়ি পথে হাঁটতে হয় বলে সিদ্ধান্ত বদল করে বেলপাহাড়ি ব্লক অফিস প্রাঙ্গণের সরকারি অতিথিশালায় সপার্ষদ চলে আসেন। মুকুলবাবুর জন্য তাঁর অনুগামীরা ঝাড়গ্রামে একটি বেসরকারি অতিথিশালায় থাকার বন্দোবস্ত করেছিলেন। কিন্তু মুকুলবাবু বেলপাহাড়িতে থেকে যান। সরকারি অতিথিশালার দোতলার ঘরে অজস্র নেতা-কর্মীর সঙ্গে সন্ধে থেকে রাত পর্যন্ত ঘরোয়া কথাবার্তা বলেন। যাঁর বেশির ভাগটাই সংগঠন কেন্দ্রিক। বিনপুর বিধানসভা এলাকায় দলের সংগঠনের অবস্থা সম্পর্কে কর্মীদের কাছে বিস্তারিত খোঁজ নেন। রাতে তৃপ্তি করে খেয়েছেন গরম ভাত, বেগুনভাজা, মুগের ডাল, আলুপোস্ত আর হাঁসের ডিমের ডালনা।

সোমবার প্রাতঃরাশ সেরে সকাল সাড়ে দশটায় বাঁকুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুকুল। যাওয়ার আগে কর্মীদের উদ্দেশ্যে মুকুলের বার্তা: “২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে সিপিএমকে ২৫-এর কমে নামিয়ে দিতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন