শনিবার বিকেল ৩টে। মেদিনীপুর সদর মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে তখনও মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার জন্য ভিড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
ষাটোর্ধ্ব প্রৌঢ় সবে ব্লক অফিসে ঢুকেছেন। হঠাৎ তাঁর পথ আটকালেন রুখলেন কয়েকজন। প্রৌঢ় কিছু বলার আগেই তাঁদের চিৎকার, ‘‘যান, ফিরে যান। এখন কোনও কাজ হবে না। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন চলছে, দেখতে পাচ্ছেন না। ১০ এপ্রিলের পরে আসবেন।’’
থতমত হয়ে বেশ কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। তা দেখে আর এক বলে উঠলেন, ‘‘ওই ওঁকে ধর তো দেখি। ব্যাগে কী রয়েছে দেখ। মনে হয় মনোনয়ন তুলতে এসেছেন।’’ ব্যাগ তল্লাশি হল বটে। কিন্তু মিলল না মনোনয়ন সংক্রান্ত কোনও নথি। শ্রম দফতরের প্রকল্পের পাস বই এবং ভোটার কার্ডের জেরক্স নিয়ে অন্য কোনও কাজে ওই প্রৌঢ় ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন। কাজ তো হলই না। উল্টে জুটল হেনস্তা।
শনিবার সকালের ওই ঘটনা সুতাহাটা ব্লক অফিসে চত্বরের। মনোনয়নের ঠেলায় গত মঙ্গলবার থেকে দফতরে অন্য কাজে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়েরা। হলদিয়া, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকেও সাধারণ মানুষের এমন অভিযোগ ভুরিভুরি। তাঁদের দাবি, শুক্রবার থেকে হলদিয়ার মহকুমাশাসকের দফতরে জন সাধারণের ঢোকা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, ওই সব দফতরে যাতে ‘মাছি’ও গলতে না পারে সে জন্য দল বেঁধে ‘পাহারা’ দিচ্ছেন শাসকদলের সদস্যেরা।
শুক্রবার জমি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি ছিল মহকুমাশাসকের দফতরে। কিন্তু বাসুদেবপুরের বাসিন্দা রতন মাঝি ঢুকতেই পারল না। তাঁর অভিযোগ, পুলিশের সামনেই শাসকদলের লোকেরা ভিতরে যেতে দেয়নি। মামলার কথা বলেও মেলেনি ছাড়। এদিন মাইগ্রেশনের শংসাপত্র নিতে চকদ্বীপার এক কলেজ পড়ুয়া যান হলদিয়ার বিডিও দফতরে। কিন্তু অভিযোগ, বিরোধী দলের সমর্থক ভেবে তাঁকে তাড়া করা হয়।
এমন ভুরিভুরি ঘটনা সামনে আসলেও বিভিন্ন বিডিও রাজর্ষি নাথ অবশ্য বলছেন, ‘‘দফতরে সব কাজ স্বাভাবিকই চলছে।’’ যদিও এ নিয়ে মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দুচন্দ্র নস্কর বলেন, ‘‘মনোনয়নের জন্য দফতরগুলিতে নিরাপত্তা আটোসাটো করা হয়েছে। তাই কিছুটা অসুবিধে হতেই পারে। তবে কোনও অভিযোগ কেউ করেনি।’’
পাঁশকুড়া ব্লক অফিসেও হলদিয়াবাসীর মতোই অভিজ্ঞতা হয়েছে মেচগ্রাম এলাকার এক বাসিন্দার। পোষা কুকুর অসুস্থ হওয়ায় ব্লক প্রাণী সম্পদ দফতরের চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন ওই প্রৌঢ়। কিন্তু ঢোকার মুখেই তাঁকে আটকানো হয়। শেষে অনেক বুঝিয়ে ছাড় মেলে। সিপিএম বিধায়ক ইব্রাহিম আলির অভিযোগ, ‘‘পাঁশকুড়া ব্লক অফিসের সামনেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীদল আমাদের প্রার্থীদের উপর আক্রমণ করেছিল। বিভিন্ন কাজে বিডিও অফিসে যাওয়া সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হেনস্তা করছে তারা। অফিসের চত্বরে পুলিশ থাকা সত্ত্বেও তারা কোনও পদক্ষেপ করছে না।’’
অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা জাইদুল খান অবশ্য বলেন, ‘‘বিডিও অফিসের সামনে আমাদের লোক নেই। বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধা বা অন্য কাজে যাওয়া বাসিন্দাদের হেনস্তার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ আর পাঁশকুড়ার বিডিও বিকাশ দত্তের কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষকে হেনস্তা নিয়ে আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি।’’
বিডিও’র মন্তব্য শুনে এলাকাবাসীর কটাক্ষ, ‘‘দফতরে ঢুকতে পারলে তবেই তো অভিযোগ জানাব। আগে প্রাণ বাঁচাব, না অভিযোগ জানাব!’’