মনোনয়ন প্রত্যাহারে সন্ত্রাস

বিরোধীদের নিশানায় ফের তৃণমূল

বিজেপি এবং সিপিএমের অভিযোগকে সারবত্তাহীন বলে দাবি করেছেন হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি থানায়।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক ও হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:৩৫
Share:

তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে দেওয়াল লিখন। রামনগরে। নিজস্ব চিত্র

মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্বে শাসক দলের বিরুদ্ধে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন প্রত্যাহার শুরু হতেই ফের শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিজেপি এবং বামেরা।

Advertisement

বুধবার রাত থেকে নন্দীগ্রাম-২ ব্লক সহ খেজুরি, কাঁথি-৩ ব্লক প্রভৃতি এলাকায় বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়ে সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কিসমত রানিচক গ্রামে ঘটনা। ওই ব্লকে রঘুনাথপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন নিরঞ্জন আদক।

Advertisement

নিরঞ্জনবাবুর অভিযোগ, বুধবার রাতে একদল তৃণমূল সমর্থক বাড়িতে গিয়ে তাঁর খোঁজ করে। তিনি সেই সময় বাড়িতে ছিলেন না। তাঁকে না পেয়ে বাড়িতে ঢুকে তারা ভাঙচুর চালায়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে প্রাণনাশ করা হবে বলে স্ত্রী’র গলায় ছুরি ঠেকিয়ে হুমকি দেয়।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে একাধিক জায়গায় বামফ্রন্ট প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যহারের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় তৃণমূলের লোকজন তাঁদের দলের প্রার্থীদের বাড়িতে হামলা করছে, হুমকি দিচ্ছে। পাঁশকুড়া ব্লকের রঘুনাথবাড়ি ও গোবিন্দনগর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকাতেও বাম প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে।’’

সিপিএমের অভিযোগ অস্বীকার করে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূলের আহ্বায়ক শরৎ মেট্যা বলেন, ‘‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য সিপিএম প্রার্থীদের কাউকে হুমকি দেওয়া হয়নি। রঘুনাথপুর এলাকায় সিপিএমের প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে এলাকায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’’

হলদিয়া গ্রামীণ এলাকায় ২৫৩ নম্বর বুথের বিজেপি প্রার্থী অপর্ণা প্রধানের বাড়িতে বুধবার রাতে এক দল দুষ্কৃতী চড়াও হয়ে তাঁর কাছ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ফরমে সই করিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। খেজুরি-২ ব্লকেও গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫ জন প্রার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয় বলে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য শ্যামল মাইতি বলেন, ‘‘বিরোধী প্রার্থীর সমর্থনে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার জন্য দলীয় কর্মীদের উপর অত্যাচার চলছে। যাতে কোনও গণ্ডগোল না হয়, তার জন্য পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’

সন্ত্রাসের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল। নন্দীগ্রামের তৃণমূল ব্লক সভাপতি মেঘনাথ পাল বলেন, ‘‘আর কত নাটক করবে বিরোধীরা! মনোনয়ন তোলার সময় সন্ত্রাসের হিড়িক তুলেছিল। তা হলে এত সংখ্যক মনোনয়ন জমা পড়ল কী ভাবে? আসলে ওরা কিছু লোককে ভুল বুঝিয়ে প্রার্থী করেছিল। তারাই মনোনয়ন তুলে নিচ্ছে।

বিজেপি এবং সিপিএমের অভিযোগকে সারবত্তাহীন বলে দাবি করেছেন হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি থানায়।’’

এ সবের মধ্যেই নন্দকুমারের সাওড়াবেড়িয়া জালপাই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঠাকুরচক গ্রামে এক তৃণমূল সমর্থককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সিপিএম সমর্থকদের বিরুদ্ধে। অভিজিৎ সামন্ত নামে স্থানীয় ওই তৃণমূল সমর্থককে বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ির কাছেই কয়েকজন সিপিএম সমর্থক মারধর করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় নন্দকুমার থানায় তিন সিপিএম সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা সুকুমার বেরার অভিযোগ, ‘‘সিপিএম সমর্থকরা আমাদের দলের এক সমর্থককে মারধর করেছে। এলাকার মানুষকে সন্ত্রস্ত করতে ওর এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’’ সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, এটা পারিবারিক বিবাদের জের। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন