একক লড়াই কঠিন হবে, মানছেন তৃণমূলের বহু নেতাই

পাঁশকুড়ার হাউর এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলেন সিপিএমের প্রার্থী আশুতোষ মান্না। বিডিও অফিসের সামনে তৃণমূলের লোকজনের বাধায় মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে ফিরে যান আশুতোষবাবু।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪০
Share:

প্রচারে: তমলুকের বল্লুক গ্রামে বৈঠক তৃণমূলের। নিজস্ব চিত্র

পাঁশকুড়ার হাউর এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলেন সিপিএমের প্রার্থী আশুতোষ মান্না। বিডিও অফিসের সামনে তৃণমূলের লোকজনের বাধায় মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে ফিরে যান আশুতোষবাবু। এরপর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা মেনে তমলুকে মহকুমাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে গেলে সেখানেও তৃণমূলের লোকজনের হাতে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে।

Advertisement

তবে পঞ্চায়েত সমিতির ওই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে বিজেপি প্রার্থী। ফলে বিরোধীশূন্য না হওয়ায় ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থী তথা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ-সভাপতি সুজিত রায়ের সঙ্গে সরাসরি লড়াই হচ্ছে বিজেপি প্রার্থী সমীরণ দুয়ারির। আর লড়াই কার্যত একের বিরুদ্ধে হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। কারণ বিরোধী সিপিএম প্রার্থীকে মনোনয়ন জমায় বাধা দেওয়ার ফলে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাত্র একজন প্রার্থী থাকায় সব বিরোধী দলের ভোট একজোট হতে পারে বলে আশঙ্কা তৃণমূলের। পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য করার লক্ষ্যে নেমেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে এমন ছবি উঠে আসায় কপালে ভাঁজ পড়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। লড়াইটা যে একটু কঠিন হবে তা মানছেন জেলা নেতৃত্ব।

শাসকদলের একাংশের মতো, এ ভাবে বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা না দিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ দিলে ভোট ভাগাভাগিতে বরং জেতার সম্ভবনা আরও বেশি থাকত দলের। বরং এখন কিছু আসনে লড়াই আরও কঠিন হয়ে গেল।

Advertisement

শুধু সুজিতবাবু নন, হাউর পঞ্চায়েত এলাকার বাকি দুটি পঞ্চায়েত সমিতির একটিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রয়েছে শুধু বামফ্রন্ট শরিক সিপিআই। অন্য আসনটিতে শুধু বিজেপি। ফলে ওই এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি আসনেই তৃণমূলের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই বিরোধী প্রার্থীর। ফলে লড়াইটা যে এবার কঠিন, তা মানছেন পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি দীপ্তিকুমার জানা। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে একজন বিরোধী থাকায় লড়াই শক্ত হবে জানি। তবে বামফ্রন্ট ও বিজেপি-সহ বিরোধীরা জোট বাঁধার জন্য তলে তলে চেষ্টা চালিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের বিরুদ্ধে ওরা যৌথভাবে প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিক শক্তির জোরেই তৃণমূল বিরোধীদের হারিয়ে দেবে।’’

সিপিএম বিধায়ক ইব্রাহিম আলি বলেন, ‘‘হাউর এলাকা দীর্ঘদিন ধরে বামফ্রন্টের শক্তঘাটি। কিন্তু এ বার পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমায় বাধা দিতে আক্রমণ করেছে তৃণমূলের লোকজন। তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে বিজেপির সঙ্গে আমাদের জোট বাধার গল্প শোনাচ্ছে ওরা।’’

পরিসংখ্যান বলছে, পাঁশকুড়া ব্লকের ২০৮টি পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ৭৯টিতে এবং পঞ্চায়েত সমিতির ৪০টি আসনের মধ্যে ১০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা নিশ্চিত করেছে তৃণমূল। কিন্তু বেশকিছু আসনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থী হিসেবে রয়েছে বাম কিংবা বিজেপি প্রার্থীরা। ফলে সেগুলিতে শাসক এবং বিরোধীর জোরদার লড়াইয়ের সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকেরও বেশকিছু গ্রামপঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধী হিসাবে মাত্র একজন প্রার্থী রয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কোথাও শুধু বামফ্রন্ট, বিজেপি কিংবা এসিউসি’র প্রার্থী সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে শাসকদলের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন