Birbaha Hansda

বনে ‘বনফুল’, ঘাসফুলে ক্ষোভ

বিরবাহা মন্ত্রিত্ব পাওয়ায় জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর অনুগামীরা প্রবল ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, তিনবারের বিধায়ক দুলালকে এ বার মন্ত্রী করা উচিত ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ০৬:৪৮
Share:

লাল পাড় সাদা পাঁঞ্চি শাড়িতে বিরবাহা হাঁসদা। শপথ নেওয়ার সময়ে। নিজস্ব চিত্র

তিনি এলেন, জয় করলেন এবং ‘যোগ্যদের’ পিছনে ফেলে মন্ত্রী হলেন! ঝাড়গ্রামের নবনির্বাচিত বিধায়ক বিরবাহা হাঁসদা বন প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে আড়ালে এমনই বলছেন তৃণমূলের একাংশ।

Advertisement

বিরবাহা শব্দের অর্থ বনফুল। জঙ্গলমহল থেকে নির্বাচিত নতুন বিধায়ককে বন দফতরের প্রতিমন্ত্রীই করা হয়েছে। এর আগে তৃণমূল সরকারে মন্ত্রী হয়েছেন প্রয়াত সুকুমার হাঁসদা এবং চূড়ামণি মাহাতো। তবে এই প্রথম ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে মহিলা মন্ত্রী হলেন। তৃণমূলে যোগ দিয়েই তিনি অসংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হন বিরবাহা। দলের একাংশের অসহযোগিতা সত্ত্বেও দিনরাত এক করে প্রচার করেন। শেষে ৩৮ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হন। ফলে তৃণমূলের অনেকে বলছেন, কঠিন লড়াইয়ে সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়ার পুরস্কার পেলেন সাঁওতালি সিনেমার মহানায়িকা। বিরবাহা নিজে বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলকে সবুজে ভরিয়ে তোলা এবং বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান এই দুই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করব।’’

তবে বিরবাহা মন্ত্রিত্ব পাওয়ায় জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর অনুগামীরা প্রবল ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, তিনবারের বিধায়ক দুলালকে এ বার মন্ত্রী করা উচিত ছিল। তা ছাড়া দুলালের সভাপতিত্বে জেলার চারটি আসনে বড় জয় পেয়েছে তৃণমূল। সমাজমাধ্যমে দুলালকে মন্ত্রী করা উচিত ছিল বলে মন্তব্যও করেছেন তাঁর অনুগামীরা। মন্ত্রী হতে না পেরে দুলালও হতাশ। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘নয়াগ্রাম বিধানসভা আসনে তিনবার জেতার পুরস্কার পেয়েছি। এর বেশি এখনই কিছু বলতে চাই না।’’ তবে তৃণমূলের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘনিষ্ঠমহলে দুলাল জানিয়েছেন, জেলা সভাপতি পদে তিনি থাকতে চান না।

Advertisement

রবিবার সকালেই দুলাল জানতে পারেন, তিনি মন্ত্রী হচ্ছেন না। এরপরেই গোপীবল্লভপুরের প্রয়াত বিজেপি নেতা নগেন সিংয়ের বাড়িতে গিয়ে মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। দুলাল রাজনৈতিক সৌজন্যের কথা বললেও দলের অন্দরে অবশ্য জল্পনা উস্কে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে দুলাল কেবল বলছেন, ‘‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। কী হবে সেটা তো সময় বলবে।’’ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুব্রত সাহা, জেলা তৃণমূলের আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুব্রত নন্দী একযোগে বলছেন, ‘‘লড়াকু নেত্রী বিরবাহা হাঁসদা মন্ত্রী হওয়ায় অধিকাংশ নিচুতলার কর্মীরা খুবই খুশি হয়েছেন।’’

জেলার চারটি আসনের মধ্যে দুলাল ও বিনপুরের বিজয়ী দেবনাথ হাঁসদা দলের পুরনো মুখ। রাজ্য যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ দেবনাথ অবশ্য বিনপুর থেকে প্রথম বিধায়ক হলেন। গোপীবল্লভপুরের বিজয়ী খগেন্দ্রনাথ মাহাতো সদ্য চিকিৎসক পদে ইস্তফা দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে এলেও বহুদিনের তৃণমূল সমর্থক ও প্রাক্তন সাংসদ উমা সরেনের অনুগামী। গোপীবল্লভপুরে জেতার ভাবনা ছেড়েই দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে খগেন্দ্রনাথ ২৩,৭৭৮ ভোটে জেতেন। খগেন্দ্রনাথকেও মন্ত্রী করার জন্য দলের একাংশ সওয়াল করেছিলেন। আবার বিনপুরে সব চেয়ে বেশি ব্যবধানে (৩৯,৪৯৪) জেতা দেবনাথকেও মন্ত্রিত্ব দেওয়ার জন্য দলের অন্দরে চাপ বাড়াচ্ছিলেন যুব তৃণমূলের একটি অংশ। জানা যাচ্ছে, সব দিক খতিয়ে দেখে মহিলা বিধায়ক বিরবাহাকেই প্রতিমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভোটের সময়ে দুলালের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরা। দুলাল কর্মীদের ফোন ধরতেন না। মনোনয়ন পেশের দিন মিছিলের জন্য কমিশনের অনুমতি না নিয়ে দুলাল কর্মীদের রোষের মুখেও পড়েন। তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা বলছেন, ‘‘দুলাল বিধায়কের পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান, পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদেরও ভাইস চেয়ারম্যান। রাজ্য যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি দেবনাথ ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। আর বিরবাহা প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্তও নন। ফলে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুলাল ও দেবনাথের তুলনায় বিরবাহা ক্ষমতায় ছাপিয়ে যাননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন