২০১৭ সালে পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় সিদ্ধান্তের বিপরীতে হাঁটায় ডানা ছাঁটা হয়েছিল তৎকালীন তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমানের। এরপরই সবং উপনির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন আনিসুর। তাঁর অনুগামীরাও তখন তৃণমূল ছেড়ে যোগ দেন গেরুয়া শিবিরে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর মোট তিনবার গ্রেফতার হন পাঁশকুড়ার এই বিতর্কিত নেতা।
বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তির পর পাঁশকুড়ায় আসেন আনিসুর। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতির সাথে তাঁর বিরোধ কারও অজানা নয়। সিন্টু পাঁশকুড়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আনিসুর ১৫ নম্বরের। লোকসভায় দলের প্রার্থী ভারতী ঘোষের ভোটপ্রচারে পাঁশকুড়ায় বিজেপিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সিন্টু। পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে এ বার ফলও ভাল করেছে বিজেপি। এই বিধানসভা এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ভোটে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপি। যদিও পাঁশকুড়া পুর এলাকায় বিজেপির চেয়ে প্রায় ৫ হাজার ভোটে এগিয়ে তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ায় ফিরে সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে সেই জয়ের কাণ্ডারি বলে দাবি করে আনিসুর বলেন, ‘‘আনিসুর রহমান কী জিনিস তা তৃণমূল টের পেয়েছে। জেলে বসেও দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এই জায়গায় এনেছি।’’ তা হলে কি পুর এলাকায় ‘আনিসুর ম্যাজিক’ কাজ করেনি? এ প্রশ্নের উত্তরে সিন্টুর নাম না করে আনিসুর বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া পুর এলাকায় বিজেপি তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাত করায় পিছিয়ে গিয়েছে।’’
আনিসুরের এমন মন্তব্যের পর তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তাঁর নিজের দল বিজেপি এবং শাসক দল তৃণমূলও। পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান নন্দকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া পুরসভায় যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। তাই মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে।’’ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিলেও আনিসুরের নিজের ওয়ার্ড ১৫ নম্বরে এ বার ব্যাপক ভোট পেয়েছে তৃণমূল। এই ওয়ার্ডে বিজেপির থেকে তৃণমূল ১১০০-র বেশি ভোটে এগিয়ে। আর এই নিয়েই কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন পাঁশকুড়ার পুরনো বিজেপি কর্মীরা। প্রসঙ্গত, ২০১৭-র পুর নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তিনশোরও বেশি ভোটে জেতেন বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতি। লোকসভার ভোটেও ওই ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি।
ফলে নিজের নিজের ওয়ার্ডে শক্তির নিরিখে আনিসুরের থেকে এগিয়ে সিন্টুই। এ বিষয়ে পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা তথা দলের যুব মোর্চার রাজ্য কমিটির সদস্য সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘পাঁশকুড়ায় সার্বিকভাবে বিজেপির ভাল ফলের পিছনে আছে মোদী ফ্যাক্টর। মানুষ ওঁকে দেখে ভোট দিয়েছেন। মাঝখানে কারও কোনও ভূমিকা নেই।’’
আনিসুরের বিজেপি-তৃণমূল গোপন আঁতাতের মন্তব্যের উত্তরে সিন্টু বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া শহরে বিজেপির ভোট শতাংশ আগের থেকে অনেক বেড়েছে। অথচ উনি নিজের ওয়ার্ডেই হেরে বসে আছেন।ওঁর মুখে এ সব কথা মানায় না।’’
পাঁশকুড়ায় রাজনীতির ময়দানে আনিসুর ফিরে এলেও নতুন ও পুরনো বিজেপি এবং তৃণমূল, এই দুই প্রতিপক্ষ যে তাঁকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলবে তা বলাই বাহুল্য। এই অবস্থায় পাঁশকুড়ায় আরও দলকে মজবুত করতে বিজেপি নেতৃত্ব কী পদক্ষেপ করেন সেটাই দেখার।