লগ্নের বাকি ৬০ সেকেন্ড, বর এল স্বস্তি নিয়ে

মঙ্গলবার রাত ৯ টা নাগাদ গড়বেতার তুলসিচটিতে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বরযাত্রীদের বাসে ধাক্কা মারে। পাশের নয়ানজুলিতে বাস উল্টে যায়। বাসে ছিলেন ৪৩ জন বরযাত্রী। প্রায় প্রত্যেকেই কম বেশি আহত হন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০১:৩৮
Share:

দুর্ঘটনার পরে সরানো হচ্ছে বাস। গড়বেতার তুলসিচটিতে। নিজস্ব চিত্র

পেরিয়ে যাচ্ছে সময়। বরের দেখা নেই। উৎকণ্ঠায় পায়চারি করছেন কনের বাবা। লগ্ন যে বয়ে যায়।

Advertisement

ফোনে শুধু এটুকু বার্তা এসেছিল—‘একটা সমস্যা হয়েছে। পৌঁছতে একটু দেরি হবে। তবে চিন্তার কোনও কারণ নেই’। কিন্তু তা বলে এত দেরি!

লগ্ন শুরুর মিনিটখানেক আগে বিধ্বস্ত অবস্থায় পৌঁছলেন বর। জানা গেল, দুর্ঘটনায় পড়েছিল বরযাত্রীদের বাস। আহতদের হাসপাতালে পৌঁছতে ব্যস্ত ছিলেন বর। মঙ্গলবার রাত তখন ২টো। বর পৌঁছতেই মন্ত্র আওড়াতে শুরু করলেন পুরোহিত। গোয়ালতোড়ের ডুমুরডিহা সাক্ষী থাকল এক অন্য ধরনের বিয়ের।

Advertisement

বাঁকুড়ার কোতুলপুরের লেগো অঞ্চলের পানুয়া গ্রামের দে পাড়ার সন্তু দে-এর বিয়ে ঠিক হয়েছিল গোয়ালতোড়ের ডুমুরডিহা গ্রামের অশ্বিনী মিদ্যার মেয়ে রাখির সঙ্গে। মঙ্গলবার রাত ৯ টা নাগাদ গড়বেতার তুলসিচটিতে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বরযাত্রীদের বাসে ধাক্কা মারে। পাশের নয়ানজুলিতে বাস উল্টে যায়। বাসে ছিলেন ৪৩ জন বরযাত্রী। প্রায় প্রত্যেকেই কম বেশি আহত হন। তাঁদের মধ্যে ২৬ জনের আঘাত বেশি হওয়ায় তাঁদের রাতেই পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চেষ্টায় গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। গুরুতর হওয়ায় ৬ জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। গড়বেতা হাসপাতালের বেডে শুয়ে বরযাত্রী প্রবীর পালধী, নেপাল দে, অমিত পোড়ে বলেন, ‘‘বাসটি আস্তেই যাচ্ছিল, হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উল্টে গেল।’’ বরযাত্রীর বাস যখন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, তখন বরের গাড়ি প্রায় দেড় কিলোমিটার এগিয়ে ছিল। বরের দাদা শ্রীমন্ত দে বলেন, ‘‘ভাই খবর পেতেই গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থলে আসে, উদ্ধারকাজে হাত লাগায় ভাইও। ফুলমালা দিয়ে সাজানো গাড়িতে করে কয়েকজনকে হাসপাতালে পৌছেও দেয়।’’ রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উদ্ধারকার্যে সহায়তা করে বর বিয়ে করতে যান। তার আগে অবশ্য কনের এক আত্মীয়কে ফোনে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার ফলে যে বরযাত্রীদের অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে তা অবশ্য জানানো হয়নি কনেপক্ষকে। পেশায় ঝালাইয়ের মিস্ত্রি বছর তেইশের সন্তু বিয়ের ফাঁকে দুর্ঘটনায় জখমদের মোবাইল মারফত খোঁজখবর নেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বিয়ে সেরে নববধূ রাখিকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন সন্তু। যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘‘এই অবস্থায় বিয়ে না হলে সমস্যা হত। শ্বশুরমশাইয়েও খুব ক্ষতি হয়ে যেত।’’ নতুন জামাই সম্পর্কে শ্বশুর অশ্বিনীবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম বিয়ে হচ্ছে না, জামাই আমাদের বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল।’’

বিয়ে হয়েছে। কিন্তু পানুয়া গ্রামে বৌভাতের আয়োজন স্থগিত রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন