ইলিশ বাঁচাতে প্রচার, সাফল্য নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

বাংলাদেশ পেরেছে। এ রাজ্যও কি পারবে?ইলিশ বাঁচাতে অন্তত প্রতিবেশী দেশকে মডেল করে খানিকটা চেষ্টা তো করা যেতে পারে। সে চেষ্টা চলছে বলে জানা গেল মৎস্য দফতর সূত্রে।

Advertisement

শান্তনু বেরা

কাঁথি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

সংরক্ষণ: ইলিশ বাঁচানোর বার্তা দিতে পদযাত্রা। ফাইল চিত্র

বাংলাদেশ পেরেছে। এ রাজ্যও কি পারবে?

Advertisement

ইলিশ বাঁচাতে অন্তত প্রতিবেশী দেশকে মডেল করে খানিকটা চেষ্টা তো করা যেতে পারে। সে চেষ্টা চলছে বলে জানা গেল মৎস্য দফতর সূত্রে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে। সে দেশে একটা সময় ইলিশ শিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল আইন করে। ইলিশ সংরক্ষণকে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে তুলে ধরা হয়েছিল। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল সাধারণ মানুষের আবেগ। ফলে সচেতনতাও ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। তা ছাড়া, সেনা বাহিনী গিয়ে ইলিশ শিকার বন্ধ করেছে এমন নজিরও রয়েছে সে দেশে। এখন বাংলাদেশে আবার বড় মাপের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তাই তাদের থেকে সংরক্ষণের পদ্ধতিটা শিখে নিতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ। যদিও ২০১৫ সাল থেকেই এ রাজ্য ইলিশের জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।

বর্ষাকালে (ভাদ্র থেকে শ্রাবণ) পশ্চিমবঙ্গের উপকুলে ইলিশ ওঠে— এটাই চিরাচরিত নীতি। কিন্তু এ বছর চৈত্র মাসের শুরু থেকেই ইলিশ ধরা পড়ছে দিঘা, রসুলপুর নদীর মোহনা, পেটুয়াঘাট কিংবা খেজুরিতে। সে সব ইলিশের পেটে ডিম ভর্তি।

Advertisement

ডায়মন্ড হারবারের ইলিশ সংরক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা সপ্তর্ষি বিশ্বাস বলেন, “ইলিশ অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রজাতি। সমুদ্রে অত্যধিক ট্রলিং-এর ফলে নিজেদের প্রজন্মের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে ইলিশ তার প্রজননের বয়স এবং প্রজননকাল পরিবর্তন করেছে বলে আমরা মনে করছি। তাই ছোট ইলিশের পেটেও ডিম পাওয়া যাছে। এটা অভিযোজনের ফলও হতে পারে।’’ এই অভিযোজন যে হঠাৎ নয়, তাও মানছেন বিজ্ঞানীরা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপকদের এক গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়া ইলিশের ওজন ক্রমশ কমছে। ২০১১ সালে তা দাঁড়িয়েছিল ৩০০-৭০০ গ্রামে। এখন তা দাঁড়িয়েছে ১০০-১৫০ গ্রাম। এই তথ্যেই রীতিমত উদ্বিগ্ন রাজ্য মৎস্য দফতর। ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কনজার্ভেশন অফ নেচার’ নামক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে মৎস্য দফতর। “বাঁচলে ছোট ইলিশ, মিলবে তবেই বড় ইলিশ”— এই স্লোগানকে সামনে রেখেই ইলিশ প্রজাতিকে রক্ষার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে মৎস্য দফতর। কিন্তু সে প্রয়াস কত দূর ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরাই। কারণ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এ রাজ্যের উপকূলে চলছে ৫০০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশ ধরা। আড়াই থেকে পাঁচ হাজারের জরিমানা ও এক বছরের জেল হেফাজতের ভয়ও পরিস্থিতি বদলাতে পারছে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন এমন চলতে থাকলে দু’-আড়াই কেজির ইলিশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত হাজরা বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ইলিশ রক্ষা করতে সেনা নামাতে হয়েছিল। আর আমাদের দেশে তো বিনা বাধায় চলছে মাছ ধরা।’’ সে কথা সত্যি। এর আগেই পূর্ব মেদিনীপুরের সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) রামকৃষ্ণ সর্দার বলেছিলেন, ‘‘দফতরে কর্মীর অভাব তাই নজরদারি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’’ প্রশ্ন সেখানেই? আদৌ কি এ রাজ্যে ইলিশ বাঁচানো সম্ভব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন