জখম: দুষ্কৃতীদের হানায় আহতেরা। নিজস্ব চিত্র
ব্যবসার টাকা নিয়ে গাড়িতে বিনপুর থেকে দাঁতনের দিকে আসছিলেন তিন ব্যবসায়ী। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে বেলদায় অন্য একটি গাড়ি তাঁদের পিছু নেয়। বেলদা থানার রানিসরাই ও নেকুড়সেনীর মাঝে জাতীয় সড়কে ব্যবসায়ীদের গাড়ি আটকে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠল একদল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে দীর্ঘক্ষণ ধরে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালালেও কোনও পুলিশের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে নারায়ণগড়ের মকরামপুর থেকে দাঁতনের সোনাকানিয়া, খড়্গপুর গ্রামীণের রূপনারায়ণপুর, জকপুর, চাঙ্গুয়ালে রাতে প্রায়ই ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। বেলদাতেও দিনে দিনে ছিনতাইয়ের প্রবণতা বাড়ছে। মাস কয়েক আগেই জাতীয় সড়ক ধরে গাড়িতে বেলদায় বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছিলেন আতিক বার্নি-সহ খড়্গপুরের দুই ব্যবসায়ী। বেলদার কাছে এক যুবককে রাস্তায় কাতরাতে দেখে গাড়ি থামান আতিক। এরপরেই বেশ কয়েকজন এসে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গাড়ি ছিনিয়ে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। দিন কয়েক আগে কালিবাগিচায় একটি পেট্রোল পাম্পেও ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দাঁতনের আইকোলার সব্জি ব্যবসায়ী উত্তম মাইতি, চকইসমাইলের গরু ব্যবসায়ী বিমল পাত্র ও ওড়িশার জলেশ্বরের নাচিন্দার গরু ব্যবসায়ী রামচন্দ্র দাস একটি গাড়িতে বিনপুর গিয়েছিলেন। ব্যবসার কাজ সেরে বিনপুর থেকে গাড়িতেই বাড়ি ফিরছিলেন সকলে। খড়্গপুর-ভুবনেশ্বর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে বেলদার রানিসরাই থেকে ওই গাড়িটির পিছু নেয় অন্য একটি গাড়ি।
বেলদার নেকুড়সেনীর কাছে ব্যবসায়ীদের গাড়ির পথ আটকায় দ্বিতীয় গাড়িটি। জাতীয় সড়কের ধারে গার্ডওয়ালে ধাক্কা লেগে দাঁড়িয়ে যায় ব্যবসায়ীদের গাড়িটি। দুষ্কৃতীরা নেমে ওই ব্যবসায়ীদের মাথায় আঘাত করে। ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে বিমলবাবুর থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরে জখম ব্যবসায়ী রামচন্দ্রবাবু ও উত্তমবাবুকে বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনায় বেলদা থানায় ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
জখম উত্তমবাবুর দাবি, “বিমল ও রামচন্দ্র বিনপুরে ব্যবসার টাকা সংগ্রহে গিয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে আমিও ব্যবসার কাজে গিয়েছিলাম। ফেরার সময়ে কয়েকজন দুষ্কৃতী আমাদের গাড়ি আটকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে টাকা লুঠ করে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘক্ষণ ধরে এই ঘটনা ঘটলেও কোনও পুলিশ রাস্তায় ছিল না।”
পুলিশি টহলদারির অভাবকেই ছিনতাই বেড়ে চলার জন্য দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ‘বেলদা ফেডারেশন অফ ট্রেডার্স অর্গানাইজেশন’-এর সহ-সম্পাদক রাজু চান্ডক বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীরা জাতীয় সড়ক ধরেই যাতায়াত করি। কিন্তু দিনে দিনে ছিনতাই বেড়ে চলায় আমরা আতঙ্কিত।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আসলে জাতীয় সড়কে পুলিশ নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। টহলদারির বালাই নেই। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।”
পুলিশের অবশ্য দাবি, ঘটনার পরে ভোর পর্যন্ত জাতীয় সড়কের বিভিন্ন এলাকায় নাকা চলেছে। দুষ্কৃতীদের ধরতে তল্লাশি চলছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত তদন্ত হবে।”