ফুটপাথে অবরুদ্ধ শহরের নিকাশি

আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস। শহরবাসীর নানা দাবি, প্রাপ্তি-প্রত্যাশা নিয়ে হয় আলোচনা। সঞ্চালনায় সুমন ঘোষ। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস। শহরবাসীর নানা দাবি, প্রাপ্তি-প্রত্যাশা নিয়ে হয় আলোচনা। সঞ্চালনায় সুমন ঘোষ। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৪
Share:

রাস্তার পাশেই ফুটপাথ। নিকাশি নালার বালাই নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভাসে রাস্তা। ইনসেটে, মুখোমুখি উপ-পুরপ্রধান। — সৌমেশ্বর মণ্ডল।

ফুটপাথ কোথাও উঁচু, কোথাও সমতল। ফুটপাথের কারণে ক্ষতি হয়েছে নিকাশি ব্যবস্থারও। নিয়ম মেনে শহরে ফুটপাথের কাজ হচ্ছে না কেন?

Advertisement

অসীম দত্ত (আইনজীবী), ২৩ নম্বর ওয়ার্ড

উপ-পুরপ্রধান: স্টিম রোলার চালিয়ে উন্নয়নের কাজ করতে রাজি নই। রাস্তার ধারে বসবাসকারী মানুষ, ব্যবসায়ীরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, সেদিকে নজর রেখেই ফুটপাথ তৈরি হচ্ছে। ফুটপাথের জন্য নিকাশি ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। নিকাশির জন্য নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে।

Advertisement

যতদিন যাচ্ছে শহরের ফুটপাথ বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ফুটপাথ নিয়ে কি কোনও চিন্তাভাবনা রয়েছে পুরসভার?

সৌরভ পাল (ছাত্র), ১২ নম্বর ওয়ার্ড

উপ-পুরপ্রধান: শহরে হকার সমস্যার কথা অস্বীকার করছি না। বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, সরকারি জায়গা পেলেই যে কেউ বসে যাবেন, এটা হবে না। শহরবাসী যেমন চলাফেরা করবেন, হকাররাও যাতে ব্যবসা করতে পারেন, সে ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।

পার্কিং জোন নেই। রাস্তার দু’দিক দখল করে গজিয়ে উঠেছে দোকান। বাইক বাইরে রেখে অনেকে দোকানে ঢুকে পড়ছেন। ফলে যানজট ও দুর্ঘটনা দুই-ই বাড়ছে?

গোপাল দাস (সঙ্গীতশিল্পী), ২ নম্বর ওয়ার্ড

উপ-পুরপ্রধান: পার্কিং জোন নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। জায়গার অপ্রতুলতার কারণে প্রয়োজনে আন্ডারগ্রাউন্ডেও পার্কিং জোন করা যায় কি না তা নিয়ে শীঘ্রই সমীক্ষা করা হবে।

দিনে দিনে বেকারত্ব বাড়ছে। কর্মসংস্থানের জন্য পুরসভার কি কিছু পরিকল্পনা রয়েছে?

মদনচন্দ্র পাল (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক), ২৩ নম্বর ওয়ার্ড

উপ-পুরপ্রধান: পুরসভার পক্ষ থেকে নগর জীবিকা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যিনি যে কাজে পারদর্শী, সেই কাজের জন্য পুরসভায় নাম লেখাতে পারবেন। বিদ্যুৎ ও কলের সমস্যার কথা জানিয়ে শহরের বাসিন্দারা টোল ফ্রি নম্বরে ১৮০০ ৩৪৫৩ ২৮৪ ফোন করতে পারেন। বাড়িতে প্রয়োজনীয় মিস্ত্রি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

জলট্যাঙ্ক থেকে ডাকবাংলো রাস্তা বেহাল। সংস্কার কবে হবে?

মলয়রঞ্জন নায়েক (রেলকর্মী), ২৩ নম্বর ওয়ার্ড

উপ-পুরপ্রধান: দু’বছর আট মাসে রাস্তাটি সারানো হয়েছিল। এত তাড়াতাড়ি খারাপ হওয়ার কথা নয়। বালি খাদানের কারণে ভারী যানবাহন চলায় রাস্তা দ্রুত খারাপ হয়েছে। পূর্ত দফরত যাতে রাস্তাটি ভারী যান চলাচলের উপযুক্ত করে তোলে সে কথা প্রশাসনকে জানিয়েছি।

এয়ার হর্নের দাপটে টেকা দায়। শব্দদানবের হাত থেকে নিষ্কৃতি দিতে কী করছে পুরসভা?

শহরের কোথাও জলের সঙ্কট আবার কোথাও এ ভাবেই নষ্ট হয় পানীয় জল।

সঞ্জয় সরকার (ব্যবসায়ী), ৫ নম্বর ওয়ার্ড

উপ-পুরপ্রধান: সত্যিই এটা একটা সমস্যা। শীঘ্রই পুলিশ ও পরিবহণ দফতরকে বিষয়টি জানাব। প্রতিদিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে হর্নের দাপটও। এয়ার হর্ন বন্ধে প্রয়োজনে পরিবহণ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েও আবেদন জানাব।

দিনের বেলাতেও পথবাতি জ্বলে। বাড়িতে বিদ্যুতের বিল দেখেই বুঝতে পারি বিদ্যুৎ খরচ কত বেড়েছে। বড় বড় ভেপার ল্যাম্প জ্বললে তো অনেক অর্থের অপচয়। সেই টাকায় তো অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়। এটা কি বন্ধ করা যায় না?

সৈকত সরকার (সরকারি কর্মী), ২৩ নম্বর ওয়ার্ড

উপ-পুরপ্রধান: এটা একটা সমস্যা। সুইচ থাকা সত্ত্বেও সমস্যা মেটেনি। কারণ, ঝড় বৃষ্টিতেও সুইচ বাইরে থাকে। ফলে শক লাগার ভয়ে অনেকে লাঠি দিয়ে সুইচ বন্ধের চেষ্টা করেন, আবার অনেকে করেন না। তাই আমরা ‘টাইমার’ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। দু’একটি ক্ষেত্রে তা কার্যকরও করা হয়েছে। ধীরে ধীরে শহরের প্রতিটি এলাকাতেই ‘টাইমার’ লাগানোর জন্য পদক্ষেপ করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতেই আলো জ্বলবে ও নিভবে।

রাস্তার কুকুরের উপর অনেকেই নির্যাতন করেন। এটা ঠিক যে, বর্তমানে শহরে কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু কুকুর তো মানুষের অনেক উপকার করে। নির্যাতন বন্ধে পুরসভা কী পদক্ষেপ করছে?

জয়তী সরকার (গৃহবধূ), ২৩ নম্বর ওয়ার্ড

উপ-পুরপ্রধান: অনেকে বলেন কুকুরের উপদ্রবে টেকা দায়। মানুষ যেমন নিরুপদ্রবে থাকবেন তেমনই কুকুরেরও বাঁচার অধিকার রয়েছে। নির্বীজকরণ করে হোক বা অন্য কোনও পদ্ধতিতে কী ভাবে দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা যায়, তা দেখব। এ বিষয়ে যে সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করেন তাঁদের পরামর্শ নিয়ে পদক্ষেপ করব।

সংস্কৃতিচর্চায় মেদিনীপুরের সুনাম ছিল। বর্তমানে কোথাও যেন ভাটা পড়েছে। সংস্কৃতি চর্চার জন্য পুরসভা কি ওয়ার্ড ভিত্তিক নাটক, গানের প্রতিযোগিতা করতে পারে না?

অভিজিৎ ভট্টাচার্য (ব্যবসায়ী), ২৩ নম্বর ওয়ার্ড

উপ-পুরপ্রধান: দৈনন্দিন নাগরিক পরিষেবার চাপ এতটাই বেড়েছে যে পুরসভার পক্ষে এই কাজে বেশি সময় ব্যয় কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জঞ্জাল সাফাই থেকে রাস্তার আলো, নিকাশি সংস্কারের কাজ করতেই হিমশিম অবস্থা। তবে এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলি উদ্যোগী হলে, অবশ্যই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।

একবার আন্তঃ ওয়ার্ড ফুটবল প্রতিযোগিতা করেছিল পুরসভা। শহরে সাড়াও পড়েছিল। আর তেমন উদ্যোগ দেখছি না কেন?

অচিন্ত্য ভট্টাচার্য (ক্রীড়াবিদ), ২৩ নম্বর ওয়ার্ড

উপ-পুরপ্রধান: পুরসভার দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। আবারও এমন কিছু করা যায় কি না দেখব। স্থায়ী ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন করার নিয়ে পুরবোর্ডে আলোচনা করা হবে। প্রায় প্রত্যেক মাঠেই আলো রয়েছে। দিনে-রাতে প্রশিক্ষণের সুযোগও রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন