ভোট মিটতেই শুরু সংঘর্ষ আর ভাঙচুর

বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমাল ছাড়া খড়্গপুরে পুরভোট মিটল নির্বিঘ্নেই। তবে ভোট শেষ হওয়ার পরেই কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল শহরের বড় আয়মা এলাকা। শনিবার রাতে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বড় আয়মায় কংগ্রেসের দলীয় ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাল্টা হিসেবে তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে কৃষ্ণা রাও, সুশীল দুবে-সহ ৫ জন কংগ্রেস সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচি

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২১
Share:

আয়মায় ভাঙচুর হওয়া কংগ্রেস কার্যালয়।

বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমাল ছাড়া খড়্গপুরে পুরভোট মিটল নির্বিঘ্নেই। তবে ভোট শেষ হওয়ার পরেই কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল শহরের বড় আয়মা এলাকা। শনিবার রাতে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বড় আয়মায় কংগ্রেসের দলীয় ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাল্টা হিসেবে তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে কৃষ্ণা রাও, সুশীল দুবে-সহ ৫ জন কংগ্রেস সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ভোট প্রায় নির্বিঘ্নে মিটলেও এ দিন রাতের এই ঘটনা ঘিরে সিঁদুরে মেঘ দেখছে শহরবাসী।

Advertisement

রেলশহরে যে কোনও ভোটেই মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য শহরবাসীর চেনা। মাফিয়াদের অঙ্গুলিহেলনেই অনেকাংশে নির্ভর করে ভোট অঙ্ক। এ বার রেল মাফিয়া বাসব রামবাবু তো তৃণমূলের হয়ে প্রচার করেছেন। আর এক মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী পূজা আবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। তবে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া ভোটে হিংসার নজির নেই বললেই চলে।

ভোটের আগে অবশ্য শাসকদলের বিরুদ্ধে বহিরাগত এনে সন্ত্রাস তৈরি করার অভিযোগে সরব হয় বিরোধী দলগুলি। ভোটের দিনও শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভোট লুঠ, বোমাবাজি, গুলি চলার ঘটনা ঘটে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি বুথ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে ছাপ্পার অভিযোগ ওঠে। ভোট লুঠের অভিযোগে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজিয়া স্কুলের সামনে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি সমর্থকেরা গোলবাজার-বড়বাতি রাস্তা অবরোধ করে। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বুথ দখল করতে গিয়ে শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বোমাবাজির অভিযোগ ঘটে।

Advertisement

ভাঙচুর হওয়া তৃণমূল সমর্থকের বাড়ি।

সিপিএমের খড়্গপুর জোনাল সদস্য অনিল দাস বলেন, “আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে ভোট শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু ভোটের দিনে খড়্গপুরে যে ধরনের অশান্তি এ বার হয়েছে তা আগে কোনও দিন দেখা যায়নি।’’ যদিও তৃণমূলের শহর সভাপতি তথা তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “সিপিএম ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বোমাবাজি করেছে। আর কয়েকটি জায়গায় নাটক করে অবরোধ হয়েছে। কংগ্রেসও আমাদের কর্মীদের মারধর করেছে। বাম আমলে শহরের মানুষ অনেক বেশি সন্ত্রাস দেখেছে।”

ভোট মিটে যাওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যায় বড় আয়মায় কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে তৃণমূল সমর্থক কয়েকজন শ্রমিকের বচসা বাধে। কংগ্রেসের কর্মীদের তাড়া খেয়ে ওই শ্রমিকেরা নিমপুরা রেল ইয়ার্ডের দিকে যান। তারপরই কংগ্রেস কার্যালয়ে ভাঙচুর হয় বলে অভিযোগ। কংগ্রেসের কয়েকজন কর্মীকেও মারধর করা হয়। এর পর কংগ্রেস সমর্থকেরা তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে পাল্টা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। জখম হন তৃণমূলের রাকেশ মাহাতো ও রেণু মেশরাম। অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থক নবীন মেশরামের বাড়িও ভাঙচুর করা হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী।

৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী সনাতন যাদবের অভিযোগ, “কিছু মদ্যপ যুবককে এলাকার মানুষ তাড়া করেছিল। ওরা ভেবেছে আমাদের কর্মীরা ওদের তাড়িয়েছে। তাই রেল ইয়ার্ড থেকে শ্রমিক এনে তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ দাসের নেতৃত্বে আমাদের ওপরে হামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ দলের জখম সমর্থকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে গ্রেফতার করেছে।” যদিও ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ দাসের পাল্টা অভিযোগ, “কংগ্রেসের লোকেরা দলের কর্মীদের ওই এলাকা থেকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ায় স্থানীয় শ্রমিকেরা প্রতিরোধ করেছে। পরে কংগ্রেস প্রার্থীর নেতৃত্বে তাঁদের কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর ও কর্মীর মাকে মারধর করা হয়েছে।”

বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, পুলিশ আরও সক্রিয় না হলেও ভবিষ্যতে গোলমাল আরও বাড়তে পারে। শহর সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলের বক্তব্য, “মানুষের প্রতিরোধে শনিবার বড় ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ভোট পরবর্তী হিংসা শুরু হয়ে গিয়েছে। এর পরে তৃণমূলের হামলা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি।” একইভাবে, বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভোটে স্থানীয় পুলিশ তৃণমূলকে কিছুটা সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জেলা পুলিশ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে সক্রিয় ছিল। কিন্তু ভোট মিটে যেতেই তৃণমূল ফের অশান্তির চেষ্টা করবে।” ভোট পরবর্তী হিংসার প্রশ্নে শহরের বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডেও বলেন, “খড়্গপুরে ভোটে হিংসার নজির নেই। কিন্তু আয়মায় বহিরাগত হিরাডির মানুষ হামলা চালিয়েছে।’’ তাঁর আশঙ্কা, ‘‘ভোট গণনার দিনেও অশান্তির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু হামলার পরে পুলিশ একতরফা কাউকে গ্রেফতার করলে আমরাও আন্দোলনে নামব।” যদিও শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “ভোটের পর হিংসার আশঙ্কা থাকলে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে রক্তগঙ্গা বয়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। মানুষ সন্ত্রাস পছন্দ করে না।’’

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement