অটো-টোটো দ্বৈরথে নাভিশ্বাস শহরবাসীর

অটোর দৌরাত্ম্য ছিলই। এ বার দোসর টোটো। বুধবার খড়্গপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডে অটোর চালকদের সঙ্গে কয়েকজন টোটো চালকের হাতাহাতি বাধে। বন্ধ হয়ে যায় অটো ও টোটোর চলাচল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০১:০২
Share:

অটো ও টোটো চালকদের গোলমালে খড়্গপুরে বন্ধ পরিষেবা। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

অটোর দৌরাত্ম্য ছিলই। এ বার দোসর টোটো।

Advertisement

বুধবার খড়্গপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডে অটোর চালকদের সঙ্গে কয়েকজন টোটো চালকের হাতাহাতি বাধে। বন্ধ হয়ে যায় অটো ও টোটোর চলাচল। ঘটনায় দু’পক্ষই খড়্গপুর টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করে। শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলে বুধবার থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় অটো চালকেরা। গোলমালের পর থেকে শহরের রাস্তায় এ দিন টোটোরও দেখা মেলেনি। দিনের ব্যস্ত সময়ে গাড়ি না পেয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের।

রেলশহরে সত্তরের দশকে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল টাউন বাস। সেই সময় শহরে ছিল না কোনও সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডও। পরে রেল স্টেশনের মালগুদাম সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড গড়ে উঠলে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় টাউন বাস পরিষেবা। তখন স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে শহরবাসীর অন্যতম ভরসা ছিল রিকশা। ২০০০ সালের পর থেকে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর শহরে অটোর পারমিট দিতে শুরু করে। বর্তমানে খড়্গপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরের বিভিন্ন রুটে প্রায় ৩৮০টিরও বেশি অটো চলাচল করে।

Advertisement

প্রথমে শুধুমাত্র বাসস্ট্যান্ড থেকে মালঞ্চ ও সালুয়া রুটে অটো চলাচল করত। বর্তমানে শহরের নিমপুরা, আরামবাটি, জকপুর, চৌরঙ্গী, কলাইকুণ্ডা-সহ বিভিন্ন রুটে চলছে অটো। শুধুমাত্র মালঞ্চ রুটে প্রায় ১১০টি অটো চলে। এ ছাড়া নিমপুরা রুটে প্রায় ৮০টি অটো চলে। নিয়ম অনুযায়ী অটোয় ১০ জন যাত্রী পরিবহণের কথা। অথচ নিয়মের তোয়াক্কা না করে অধিকাংশ অটোতেই ১৩-১৪ জন যাত্রী তোলা হয়। ফলে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনারও আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি শহরের পথে নেমেছে টোটো। খড়্গপুর শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে টোটো চালকদের একটি অফিসও খোলা হয়েছে। যদিও পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে এখনও টোটো চালকদের লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। এ দিন খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “আমার ওয়ার্ডে টোটো চালকেরা নিজেরাই একটা অফিস গড়েছে। ওরা সংগঠনে আমাকে সভাপতি করার কথা ভাবছে। কিন্তু আমি পুরপ্রধানের পদে থাকায় এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমিও চাই অটো ও টোটো সমন্বয় রেখে নির্দিষ্ট রুটে চলাচল করুক।”

শহরের বাসস্ট্যান্ড-মালঞ্চ রুটে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় অটো চলে। এই রুটেও টোটো পরিষেবা চালু হওয়ায় যাত্রী হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে অটো চালকেরা। এ দিন খড়্গপুর বাসস্ট্যান্ডের অটো স্ট্যান্ডে কয়েকটি টোটো দাঁড়িয়ে থাকায় গোলমাল বাধে। শুরু হয় উভয় পক্ষের হাতাহাতি। তারপরই অটো চালকেরা ধর্মঘটের ডাক দেয়। অটো চালক সুব্রত সরকার, সূর্য মজুমদারেরা বলেন, “টোটো তো শহরের গলিপথে চলার কথা। কিন্তু ওরা তা না মেনে আমাদের রুটে ঢুকে পড়ছে। অনেক যাত্রী তুলছে। প্রশাসন সব জেনেও নীরব।”

শহরের অটো-রিকশা অপারেটর ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি সমীর গুহ-র কথায়, “আমরা টোটোর বিরোধী নই। কিন্তু ওরা লাগামছাড়া আচরণ করছে। টোটো উল্টে কোনও যাত্রীর ক্ষতি হলে বিমা না থাকলে দায় কে নেবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘শহরে টোটো চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘট চলবে।”

যদিও এ প্রসঙ্গে শহরের মালঞ্চ-র এক টোটো মালিক দীপক পাণ্ডের কথায়, “প্রশাসন আমাদের রুট পারমিট দিলেই নিয়ে নেব। তবে এটা তো নিছক রিকশা। তাই যেখানে খুশি আমরা যেতে পারি। কিন্তু অটো চালকেরা যেটা করছে ঠিক করছে না।” এ দিন একইসঙ্গে অটো ও টোটো চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তির শিকার হন নিত্যযাত্রীরা। ইন্দার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা মহুয়া চৌধুরী বলেন, “আমি প্রতিদিন অটোয় স্কুলে যাই। এ দিন ওদের গোলমালের জেরে দুর্ভোগে পড়তে হল। তিন বার গাড়ি বদলে স্কুলে পৌঁছেছি। প্রশাসনের এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা উচিত।” যদিও এ দিন খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “অটো ও টোটো চালকদের মধ্যে গোলমালের ঘটনার কথা শুনেছি। কেউ এ বিষয়ে কিছু জানালে জেলাশাসক ও পরিবহণ আধিকারিককে জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন