বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে নিয়ম ভেঙে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া এগোচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল।
নিয়ম অনুযায়ী ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সার্ভিস কমিশনে’র মাধ্যমে সমবায় ব্যাঙ্কে গ্রুপ সি এবং অফিসার পদমর্যাদার কর্মী নিয়োগ হয়। আর সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ নিজেরা শুধু চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্ক সার্ভিস কমিশনকে এড়িয়ে সরাসরি পাঁচজন অফিসার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ। আজ, রবিবার সেই নিয়োগ সংক্রান্ত লিখিত পরীক্ষা হবে মেদিনীপুর কলেজে। এ ক্ষেত্রে নিয়মমাফিক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। শুধু কলকাতার এক সংবাদপত্রে ছোট বিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায় সেরেছেন কর্তৃপক্ষ। চাকরি প্রার্থীদের একাংশের তাই অভিযোগ, পছন্দমতো প্রার্থী নিয়োগ করতেই পরীক্ষার নামে এই প্রহসন।
ওয়েস্টবেঙ্গল কো-অপারেটিভ সার্ভিস কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব অসীম চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এ ভাবে অফিসার নিয়োগের পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ করতে পারেন না। এটা কমিশনের করার কথা। বিদ্যাসাগর সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানাননি।” নিয়ম অনুযায়ী, গ্রুপ সি-র কর্মী এবং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ করে প্রার্থী বাছাই করে। তারপর সফল প্রার্থীদের নাম সংশ্লিষ্ট সমবায় ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়। তারপর ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ নিয়োগপত্র দেন। সমবায় দফতরের এক কর্তার মতে, যদি এই নিয়মের বাইরে গিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়, তাহলে তা একেবারেই অবৈধ। এ নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ হলে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ খুবই সমস্যায় পড়বেন।
পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম, এই তিন জেলায় ‘বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, মেদিনীপুর’-এর ৩৮টি শাখা রয়েছে। ব্যাঙ্কের কার্যকরী মূলধন প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা। রাজ্য তথা সারা দেশের মধ্যে এই ব্যাঙ্ক অন্যতম সেরা সমবায় ব্যাঙ্কের মর্যাদা প্রাপ্ত। তারপরেও বারবার অনিময়ের অভিযোগ উঠছে এখানে। গত বছরও সার্ভিস কমিশনকে এড়িয়ে বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কে বেশ কয়েকজন গ্রুপ সি কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন শাসকদলের প্রথম সারির নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ঘনিষ্ঠ। অভিযোগ, ব্যাঙ্কের বর্তমান পরিচালন সমিতিতে থাকা শাসকদলের প্রভাবশালী মহলের চাপে সার্ভিস কমিশনকে এড়িয়ে এ বারও নিয়োগ প্রক্রিয়া হচ্ছে।
বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর অবশ্য দাবি, সমবায় আইন মেনেই নিয়োগ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা অনিয়মের অভিযোগ করছেন, সমবায় আইন জানা থাকলে তাঁরা এ সব বলতেন না। গত বছরও নিয়ম মেনেই কর্মী নিয়োগ হয়েছে।’’ ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির সম্পাদক উত্তম দে-রও বক্তব্য, “পরিচালন সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েই ৪৫জনকে লিখিত পরীক্ষায় ডাকা হয়েছে।” তাঁর দাবি, “কমিশনকে জানিয়েও সময়মতো লোক মেলে না। তাই আমরা নিজেরাই নিয়োগের জন্য পদক্ষেপ করছি।”