গত শনিবার সন্ধ্যায় অসমের ডুমডুমা সেন্ট মেরিজ স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতরে মেসের মধ্যে খুনের ঘটনা এখন চোখের সামনে ভাসছে। মঙ্গলবার শেখ ইদ্রিস ও শেখ মহম্মদের দেহ বাড়িতে পৌঁছেছে। আমিও এদিনই ফিরে এসেছি। ওখানে, ওই ঘরে আর থাকতে আতঙ্ক হচ্ছিল।
শেখ মহম্মদের হাত ধরেই মাস দেড়েক আগে অসমে গিয়েছিলাম নির্মাণ শিল্পে কাজ করতে। ওখানে অসমের আর নির্মাণ কর্মী রাজু গৌড়ের সঙ্গে বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল আমার। রাজুকে নাম ধরে নয়, ‘বন্ধু’ বলেই ডাকতাম। আমরা পাঁশকুড়ার মোট ৫ জন নির্মাণ শ্রমিক থাকতাম দুমদুমার সেন্ট মেরিজ স্কুল ক্যাম্পাসের ওই শ্রমিক মেসে। আমাদের পাশের ঘরেই থাকত রাজু। আমার মতো অন্যরাও রাজুকে ‘বন্ধু’ বলেই ডাকত। কিন্তু সেই ‘বন্ধু’র হাতেই যে দু’জনের প্রাণ যাবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
ঘটনার দিন মানে শনিবার, আর পাঁচটা দিনের মতোই কাজ সেরে মেসে ফিরে রান্না চাপিয়েছিল শেখ ইদ্রিস ও শেখ মহম্মদ। বাকি দু’জন শেখ সৈয়দ ও রহিম আলি ঘরের বাইরে মোবাইলে ভিডিও দেখছিল। ভাত রান্না হয়ে গেলে আমি ভাতের ফ্যান গড়াতে ঘরের বাইরে গিয়েছিলাম।
ফ্যান গড়িয়ে ঘরে ঢুকে দেখি, ইদ্রিস ও মহম্মদ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। গোটা ঘর রক্তে মাখামাখি। আর সেখানে দা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘বন্ধু’ রাজু। আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই রাজু আমার উপরেও তেড়ে আসে। দা দিয়ে আমার ঘাড়ে কোপ মারতে যায়। কোনওরকমে ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসি। রাজুর দা’র কোপে আমার বাঁ হাত কেটে তখন রক্ত ঝরছিল। ভয়ে আর যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলাম আমি। আমার চিৎকার শুনে স্কুলের হস্টেল থেকে শিক্ষিকারা বেরিয়ে আসেন। ওঁরাই আমাকে একটি ঘরে তালাবন্দি করে রাজুর আক্রমণ থেকে বাঁচান। পরে ডুমডুমা থানার সহযোগিতায় আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। চিকিৎসার পরই বাড়ি ফেরার টিকিট কেটে ট্রেনে চেপে বসি।
কেন ‘বন্ধু’ এমন কাণ্ড করল এখনও বুঝতে পারছি না। ওর সঙ্গে আমাদের কোনও শত্রুতা ছিল না। ওর হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছি এই ঢের। আর যাব না অসমে।