প্রধানের নামে নালিশ, বদলি নির্মাণ সহায়ক

কয়েক মাস আগে গরিব মানুষের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্পে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেছিলেন ওই পঞ্চায়েতেরই নির্মাণ সহায়ক সুদীপ গিরি। সেই অভিযোগের তদন্ত হয়নি। উল্টে সেই নির্মাণ সহায়ককে বদলি করে দিল প্রশাসন।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

লালগড় শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৩
Share:

কয়েক মাস আগে গরিব মানুষের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্পে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেছিলেন ওই পঞ্চায়েতেরই নির্মাণ সহায়ক সুদীপ গিরি। সেই অভিযোগের তদন্ত হয়নি। উল্টে সেই নির্মাণ সহায়ককে বদলি করে দিল প্রশাসন।

Advertisement

এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন। কারণ সুদীপবাবু ওই সংগঠনের লালগড় ব্লক কমিটির সদস্য। সংগঠনের ঝাড়গ্রাম মহকুমা নেতা নান্টুলাল দাস বলেন, “গত ৭ এপ্রিল বদলির চিঠি হাতে পেয়েছেন সুদীপবাবু। চিঠি পাওয়ার পনেরো দিনের মধ্যে তাঁকে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের গোপীবল্লভপুর গ্রাম পঞ্চয়েতে নির্মাণ সহায়ক পদে যোগ দিতে বলা হয়েছে। এখনও তিনি যোগ দেননি। প্রশাসনিক মহলে আমরা এই বদলির প্রতিবাদ জানিয়েছি।”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের দাবি, এটি রুটিন বদলি। প্রকাশ্যে প্রশাসনের তরফে কেউ বদলি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দ্রৌপদী চালক দাবি করেছেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য সুদীপবাবুকে বদলি করা হয়নি। উনি নানা রকম অনৈতিক কাজকর্ম করছিলেন। সে ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। সেই কারণেই সুদীপবাবুকে বদলি করা হয়েছে।” দ্রৌপদীদেবী জানান, সুদীপবাবুর কিছু বকেয়া কাজ রয়েছে। আগামী ২২ তারিখের মধ্যে সেগুলি বুঝে নেওয়ার পর তাঁকে ধরমপুর পঞ্চায়েত থেকে ‘রিলিজ’ করা হবে।

Advertisement

এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমের কাছে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি সুদীপবাবু নিজেও। সুদীপবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের বক্তব্য, অভিযুক্ত প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্ত হল না, অথচ অভিযোগকারীকে বদলি করে দেওয়া হল। এটা কিছুতেই তিনি মেনে নিতে পারছেন না।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ শুক্রবার এ প্রসঙ্গে বলেন, “বিষয়টি অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। ফলে, এটা নিয়ে আমি মন্তব্য করব না। তবে কারও প্রতি কোনও অবিচার হয়ে থাকলে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখব।”

গত ১৩ মার্চ লালগড়ের বিডিও-র কাছে ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দ্রৌপদীদেবীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ওই পঞ্চায়েতেরই নির্মাণ সহায়ক সুদীপ গিরি। সুদীপবাবু অভিযোগপত্রে জানিয়েছিলেন, প্রধানের স্বজনপোষণের ফলে প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছেন। নথিপত্র দাখিল করে বিডিও-কে সুদীপবাবু জানান, গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির বিভিন্ন প্রকল্পে প্রধান, উপ-প্রধান ও অন্যান্য পঞ্চায়েত সদস্যদের পরিবারের লোকজন একাধিক বার টাকা পেয়েছেন। বিডিও-র কাছে অভিযোগ দাখিল করার পরদিনই ১৪ মার্চ ধরমপুর পঞ্চায়েত অফিসের ভিতরে সুদীপবাবুকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। প্রধানের স্বামী ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে লালগড় থানায় মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন সুদীপবাবু। এরপর থেকে পঞ্চায়েত অফিসে নানা ভাবে তাঁকে হেনস্থা করা শুরু হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূল সূত্রের খবর, গত ২৮ মার্চ প্রধান দ্রৌপদ্রীদেবী ও পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে লালগড়ে বৈঠক করেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে দলীয়স্তরে পদক্ষেপ করার জন্য ওই বৈঠকে প্রধানকে আশ্বাসও দেওয়া হয়। ওই বৈঠকের সপ্তাহখানেকের মধ্যে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে সুদীপবাবুর বদলির নির্দেশ জারি করা হয়। গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন লালগড়ের বিডিও অভিজিত্‌ সামন্ত।

নাম প্রকাশ না-করার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে নির্মাণ সহায়কের সংঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম ভীষণ রকম ব্যাহত হচ্ছিল, ফলে সুদীপবাবুকে বদলি করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও পথ ছিল না।” প্রধানের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত হল না? এ প্রসঙ্গে ওই আধিকারিক নীরব থাকলেও জবাব দিয়েছেন, খোদ প্রধান দ্রৌপদীদেবী। তাঁর কথায়, “আমরাও তো হতদরিদ্র বিপিএল পরিবারভুক্ত। নিয়ম মেনেই পরিবারের দু’একজন বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন। এর আবার তদন্ত কী হবে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন