বাসন ধোবে কে! অগত্যা ভরসা কাগজেক থালা। নিজস্ব চিত্র
পরিচারিকার ছুটি। রোজকার হেঁশেলের বিস্তর এঁটো থালা-বাসন ধোবে কে! তাই কাগজের থালা-বাটিই ভরসা শিল্পশহরের বহু পরিবারের। অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে বাজারে পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে কাগজের থালা-বাটি।
আতঙ্কের নাম কোভিড ১৯। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সংক্রমিত হয় মূলত স্পর্শে। তাই স্পর্শ এড়িয়ে চলাই এখন বাঞ্ছনীয়। আর তাই দরকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। বারবার কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে চালু হয়েছে লকডাউন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারি-বেসরকারি বহু দফতরই এখন বন্ধ| বহু বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা বাড়ি থেকেই কাজকর্ম সারছেন।
হলদিয়া জুড়ে এমন বেসরকারি শিল্প সংস্থা রয়েছে অনেকই | সেই সব গৃহকর্তা-কর্ত্রীরা-সহ শহরের বহু বাসিন্দাই সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ছুটি দিয়েছেন পরিচারিকাদের। কিন্তু সংসার তো থেমে থাকবে না৷ রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়া চলবেই। রান্নার বাসনে কাগজের থালা-বাটি ব্যবহারের জো নেই৷ তবে খাওয়ার ক্ষেত্রে কাগজের সরঞ্জাম ব্যবহার করছেন অনেকেই| হলদিয়া টাউনশিপের এক সরকারি সংস্থার আবাসনের বাসিন্দা অদিতি মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কতদিন এ ভাবে ঘরে বসে থাকতে হবে বুঝতে পারছি না। পরিশ্রম কমাতেই কাগজের থালা-বাটি কিনে এনেছি। সরকারের নির্দেশ মেনে লকডাউন পর্বে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাড়ির পরিচারিকাকে ছুটিও দিয়েছি।’’
লকডাউনের আগে থেকেই বাজারে বাজারে শুরু হয়েছে ভিড় | বহু জায়গায় লকডাউনের পরেও মুদি দোকানে ভিড় দেখা যাচ্ছে| চাল-ডাল-আনাজের সঙ্গে অনেকেই কাগজের থালা-বাটি ব্যাগ বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন। স্বভাবতই বাজারে বাড়ন্ত কাগজের নানা মাপের থালা-বাটি। হলদিয়া শহরে মুদি দোকান রয়েছে বাবলু দাসের। তিনি বলেন, "চাল, ডাল আর অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি অনেকেই বেশি সংখ্যায় কাগজের থালা-বাটি কিনছেন। সরকারের নির্দেশ মতো দোকান খোলা রেখেছি। কিন্তু কাগজের থালা-বাটির জোগান নেই।"
এই পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ গৃহকর্তা-কর্ত্রীরাই পরিচারিকাদের সবেতন ছুটি দিচ্ছেন৷ ফলে একটু হলেও স্বস্তিতে দিন আনি দিন খাই পরিচারিকারা। হলদিয়া শহরে পাঁচটি বাড়িতে কাজ করেন পরিচারিকা মিঠু দাস। তিনি বলেন, "প্রত্যেক বাড়ি থেকেই ছুটি দিয়েছে। তবে বেতন দেবে বলেছে। কার বাড়িতে, কে, কোথা থেকে এসেছে জানি না। সে ক্ষেত্রে নিজের এবং নিজের পরিবারের সংক্রমণের আশঙ্কা ছিল। সবেতন ছুটি পেয়ে কিছুটা নিরাপদ বোধ করছি। কটা দিন বাড়িতেই থাকব।"