Coronavirus

কার্ফুতে বন্দিদশায়, বাড়ির জন্য বড় চিন্তা হচ্ছে

শ্রমিক-কর্মচারীদের বেশিরভাগই উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গের। আমরা প্রায় ৪০০ জন কর্মী রিফাইনারি থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে রামানাবাজার এলাকায় মেসে রয়েছি।

Advertisement

দেবাশিস চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০২:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি

আমার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের মিহিটিকিরি গ্রামে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত নির্মাণ সংস্থায় কাজের সূত্রে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে রয়েছি পঞ্জাবের ভাতিন্দা জেলার রামানা এলাকায়। এটি গ্রামীণ বাজার এলাকা। ভাতিন্দা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে এই এলাকায় ‘গুরু গোবিন্দ সিংহ রিফাইনারি’র সম্প্রসারণের কাজে যুক্ত রয়েছি। আমাদের সংস্থার মতো এখানে পাঁচটি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার-সহ প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী-আধিকারিক যুক্ত রয়েছে।

Advertisement

শ্রমিক-কর্মচারীদের বেশিরভাগই উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গের। আমরা প্রায় ৪০০ জন কর্মী রিফাইনারি থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে রামানাবাজার এলাকায় মেসে রয়েছি। এখানে ২২টি মেস রয়েছে। অন্তত দেড়শো জন বাঙালি। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না, হাওড়া ও পুরুলিয়ার লোকজন রয়েছেন। প্রতিদিন সকালে সংস্থার গাড়িতে চেপে কাজে যাই। কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফের গাড়িতে ফিরে আসি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর পঞ্জাবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা শুরু হয়েছে কিছুদিন আগে। দিন পনেরো আগে থেকে কাজে যাওয়ার সময় রিফাইনারির গেটে স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছিল। তবে মাস্ক দেওয়া হয়নি। কিন্তু পঞ্জাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। আমিও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।

বাড়ি ফেরার জন্য আগামী ২৯ মার্চ ট্রেন ধরার কথা ছিল। বাড়িতে স্ত্রী ও সাড়ে তিন বছরের মেয়ে রয়েছে। নিয়মিত ফোনে কথা হয়। এখানে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোয় ওরাও চিন্তায় রয়েছে। তাই নির্দিষ্ট দিনে বাড়ি ফিরব বলে স্ত্রীকে জানিয়েছিলাম। আমরা ১০ জন বাঙালি বাড়ি ফেরার জন্য ছুটিও পেয়ে যাই। কিন্তু গত ২২ মার্চ সন্ধ্যায় রেল দফতর থেকে মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠানো হল কলকাতাগামী সব ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে বাড়ি ফেরার আশা ছেড়ে দিতে হয়। করোনা সতর্কতার জন্য গত শনিবার রাত থেকে এখানে কার্ফু জারি করা হয়েছে। ওই দিন কাজের শেষে রাতে সংস্থার গাড়িতে মেসে ফেরার সময় পুলিশ গাড়ি ‘চেক’ করে। রামানা বাজারে প্রায় ৩০০টি দোকান রয়েছে। রয়েছে বসতি এলাকা। বাজারে লোকজন যাতে ভিড় জমাতে না পারে সে জন্য আনাজ, ওষুধ দোকান ছাড়া সব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাস্তায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। তবে সোমবার সকালেও আমরা সংস্থার গাড়িতে কাজে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর বিকেল চারটে থেকে লকডাউন কার্যকর করার কথা ঘোষণা করা হয়। এদিনই সংস্থার কর্তারা জানান, ২৯ মার্চ পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে। ফলে আমাদের কাজ বন্ধ। লকডাউন হওয়ায় এখন মেসেই দিন কাটছে। বাজারের আনাজ-মুদি দোকান খোলা থাকায় খাওয়ার সমস্যা হচ্ছে না ঠিকই। তবে ট্রেন বাতিল হওয়ায় বাড়ি ফিরতে না পেরে ভাল লাগছে। তা ছাড়া যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে পরিবারের সকলের জন্যও চিন্তা হচ্ছে। জানি না কবে বাড়ি ফিরতে পারব।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন