হাসপাতাল, সেফ হোমে কাজে নিমরাজি
Coronavirus in Midnapore

রোগমুক্তিতে কাটেনি ভয়

জেলা প্রশাসনের নির্দেশে দিন কয়েক ধরে ঘাটাল মহকুমা প্রশাসন কর্মীর খোঁজখবর শুরু করেছে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০২:১৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

যাঁদের দায়িত্ব ছিল ভয় ভাঙানোর, যুদ্ধ জয়ের পরেও ভীত তাঁরাই।

Advertisement

করোনা নিয়ে ভয় পেও না। এই তো আমারও করোনা হয়েছিল। এখন সেরে গিয়েছি। এ ভাবেই করোনা আক্রান্তদের বোঝাবেন করোনা-যোদ্ধারা। দেবেন অভয়বাণী। চেয়েছিল রাজ্য সরকার। করোনা হাসপাতাল এবং সেফ হোমগুলির বিভিন্ন পদে তাই করোনা যোদ্ধাদেরই নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু চাওয়া-পাওয়ার মাঝে যে বিস্তর ফারাক! দেখা যাচ্ছে ভয়কে জয় করতে পারছেন না করোনা যোদ্ধারা। নানাবিধ ভয়ে কাজে রাজি হচ্ছেন না তাঁরা। কারও স্ত্রী-ছেলে মেয়ে-সহ পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার ভয়। কারও পাড়ায় একঘরে করে দেওয়ার আতঙ্ক। অনেকে আবার ভাবছেন ফের যদি নতুন করে আক্রান্ত হই!

Advertisement

জেলা প্রশাসনের নির্দেশে দিন কয়েক ধরে ঘাটাল মহকুমা প্রশাসন কর্মীর খোঁজখবর শুরু করেছে। গত তিন দিনে প্রায় ১৪০ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে মাত্র দশ-বারোজন রাজি হয়েছেন। তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বেতন-সহ নানা বিষয়ে অবগত হয়েই তাঁরা সম্মতি জানাবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দাসপুরের এক যুবকের আক্ষেপ, “আক্রান্ত হয়ে আমি যখন ভর্তি ছিলাম, গ্রামে রটে গিয়েছিল, আমি মারা গিয়েছি। বাড়ির লোকজনদের একঘরে করে রাখা হয়েছিল।এখন কাজে গেলে তো গ্রাম ছাড়তে হবে।” ঘাটাল শহরের এক যুবক মানলেন, “আমি বেকার। চাকরি খুব জরুরি। কিন্তু পাড়ার লোক রাজি হচ্ছেন না। পরিবারের আপত্তিও রয়েছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়ছে। বাড়ছে শয্যার অভাবও। তাই নতুন নতুন হাসপাতাল ও সেফহোম চালু করা হচ্ছে। জেলায় ডেবরায় সেফহোম চালু হয়েছে। ঘাটালেও দ্রুতই চালু হবে সেফহোম। সেখানে মৃদু উপসর্গদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা হবে। করোনা হাসপাতাল এবং এই সেফ হোমগুলোতে হাউসকিপিং, নিরাপত্তারক্ষীর মতো কাজে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে করোনা যোদ্ধাদের। ঠিক হয়েছিল, ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা সাদা কাগজে আবেদন করলেই চাকরি পাবেন। বেতন হবে প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা। নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরোটাই হবে ঠিকদার সংস্থার মাধ্যমে।

করোনা যোদ্ধাদের অনেকেই রাজি নন। কয়েকজন নিমরাজি। সে ক্ষেত্রে কী হবে! মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘করোনা থেকে সেরে উঠেছেন এমন লোক পেলে ভাল। না হলে অন্য লোক নিয়োগ করা হবে।’’ কিন্তু তা হলে উদ্দেশ্যপূরণ হবে তো! প্রশ্ন উঠছে স্বাস্থ্যমহলের অন্দরেই।

ভয় কাটাতে ধারাবাহিক প্রচার চলছে। মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের একাংশের মতে, এখনও একাংশের অজ্ঞতা, অসচেতনতায় আক্রান্তদের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে একবার আক্রান্ত হওয়ার পর কারও সংস্পর্শে এলে নতুন করে আক্রান্ত হবে কি না,তা-ও পরিষ্কার নয়। এমনই সব নানা কারণে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক।

তবে হাল ছাড়তে রাজি নয় প্রশাসন। জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারঙ্গী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। চিকিৎসার কারণেই কোটি কোটি মানুষ রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন।এই সত্যটি সকলকে বুঝতে হবে।আতঙ্ক কাটিয়ে করোনা যোদ্ধদেরও তাই আক্রান্তদের পাশে থাকা জরুরি।” আর ঘাটালের মহকুমা শাসক অসীম পাল বললেন, “অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কাজে যোগ দিতে রাজি হচ্ছেন না অনেকে। এখনও খোঁজ চলছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement