ফাইল চিত্র।
উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের জন্য ন্যূনতম মূল্যে ভরপেট ডিম-ভাতের ব্যবস্থা করা। বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকার ঘটা করে ‘মা’ প্রকল্প চালু করে ডিম-ভাত খাওয়ানো শুরু করে। কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই নির্বাচী বিধির গেরোয় তা বন্ধ হয়ে যায়। ভোট মিটলে এবং ক্ষমতায় ফিরলে ফের এই প্রকল্প চালু করা হবে বলে জানিয়েছিল শাসক দল। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশের পর ফের বিপুল আসন পেয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরলেও এখনও জেলায় সে ভাবে কোথাও ‘মা’ প্রকল্প চালু হতে দেখা যায়নি।
কার্যত লকডাউনে মানুষ যখন কর্মহীন, অসহায়। দু’বেলা আহার জোটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সেই সময় এই প্রকল্পে খুবই প্রয়োজনীয়তা ছিল বলে মনে করছেন মানুষজন। অথচ মহামারির পরিস্থিতিতে দেখা নেই ‘মা’ প্রকল্পের। পরিবর্তে অসহায় মানুষের ভরসা এখন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, রাজনৈতিক সংগঠন ও সুহৃদয় ব্যক্তিরা। এই অবস্থায় ফের পাঁচ টাকার ডিম-ভাত চালুর আবেদন জানালেন এগরা পুরএলাকার অসহায় মানুষজন। যা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ, ভোটের আগে সস্তার জনপ্রিয়তা কুড়োতেই পাঁচ টাকার ডিম-ভাতের ঘোষণা করেছিল শাসক-দল।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বিজেপি ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিল। তামিলনাড়ুর জয়ললিতা সরকারের এক টাকার আম্মা ক্যান্টিনের আদলে তৃণমূলের সরকার রাতারাতি পাঁচ টাকার ডিম-ভাত নিয়ে ‘মা’ প্রকল্প চালু করে। শুরুতে কলকাতা কর্পোরেশন ও পুরসভাগুলিতে ‘মা’ ক্যান্টিনে মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল। উপকৃত হয়েছিলেন কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক শহরের প্রচুর পথচলতি সাধারণ ও দুঃস্থ মানুষ। শুরুতে রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের সাফল্যে সরকারি নির্দেশ মতো জেলার প্রতিটি পুরসভায় ‘মা’ প্রকল্প চালুর নির্দেশ আসে। কিন্তু নির্দেশ আসার এক সপ্তাহ পরেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁচটি পুরসভার কোথাও ‘মা’ প্রকল্প শুরু হতে দেখা যায়নি। পুরসভাগুলিকেও এই প্রকল্পের জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল।
পরবর্তীতে জেলায় প্রথম ও একমাত্র তমলুক পুরসভার প্রশাসক রবীন্দ্রনাথ সেন ‘মা’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কিন্তু তখনও জেলার অন্য পুরসভায় এই প্রকল্প শুরুই হয়নি। ‘মা’ প্রকল্পের পাল্টা বিজেপি গ্রামে গ্রামে ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ কর্মসূচি শুরু করে। এগরা বিধানসভার সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতে কিছু বিজেপি নেতা ভোট প্রচারের ফাঁকে এই কর্মসূচিতে গ্রামের মানুষকে বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করে। ইতিমধ্যে রাজ্যে নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ায় বিধি মেনেই ‘মা’ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। ভোট পরবর্তী সময়েও সেই সব প্রকল্প এখন উধাও। এই অবস্থায় বাম সংগঠন সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং পারিবারিক উদ্যোগে বিনামূল্যে অসহায় দুঃস্থ-মানুষদের খাবার বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে। মহামারিতে কার্যত লকডাউনে কর্মহীন অসহায় মানুষ দু'বেলা অন্ন জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এগরা পুর এলাকায় এই মুহূর্তে প্রায় চার শতাধিক উদ্বাস্তু মানুষ রয়েছেন। যাঁদের প্রতিদিনের রোজগারে ভাতের জোগাড় হয়। কিন্তু করোনা বিধি নিয়ে কড়াকড়ির জন্য কাজ হারিয়ে দুর্দশায় দিন কাটছে তাঁদের। প্রায় একই অবস্থা জেলার অন্য় পুরসভাগুলিতে। দুর্দিনে পুনরায় যাতে পাঁচ টাকার ডিম ভাত চালু হয় সে জন্য় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে ওই সব অসহায় দুঃস্থ মানুষ। এগরা এক বস্তিবাসী রাখাল হাতি বলেন, ‘‘লকডাউনে হাতে কাজ নেই। রোজগার না থাকায় দু’বেলা খাওয়া জুটছে না। সরকার পাঁচ টাকার ডিম ভাত চালু করলে বেঁচে যেতাম।’’
এগরার পুরপ্রশাসক স্বপন নায়ক বলেন, ‘‘মা-প্রকল্প নিয়ে এখনও কোনও চিন্তা-ভাবনা নেই পুরসভার। এই বিষয়ে সরকারি কোনও নির্দেশও আসেনি। যদি কেউ খেতে না পান তবে পুরসভার উদ্যোগে তাঁদের খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হবে।’’
কী বলছেন বিরোধীরা? কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভোটের লোভে তৃণমূল সরকার পাঁচ টাকার ডিম ভাত খাইয়ে মানুষকে ভাঁওতা দিয়েছে। দুর্দিনে মানুষ যখন খাবারের জন্য হন্যে হচ্ছে তখন কোথায় তাদের সেই ডিম-ভাত!। আসলে অসহায় দুঃস্থ মানুষ শাসক দলের কাছে শুধুই ভোটের সংখ্যা মাত্র।’’