Coronavirus

দর্শকশূন্য চিড়িয়াখানায় সুখের সংসার, অন্তঃসত্ত্বা হর্ষিণী

বন দফতরের আধিকারিকেরা মানছেন, প্রাকৃতিক শাল জঙ্গলের মধ্যে চিড়িয়াখানাটি থাকলেও এতদিন লোকজনের কোলাহলে কার্যত নিভৃত যাপনের সুযোগ পেত না বন্যপ্রাণীরা।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ০২:১৬
Share:

চিতাবাঘ হর্ষিণী। ফাইল চিত্র

লকডাউন। দর্শকদের আনাগোনা বন্ধ। তাই নিভৃত যাপনে সংসার বাড়ছে ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানার আবাসিকদের! অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে স্ত্রী চিতাবাঘ হর্ষিণী। সাত বছরে এই প্রথমবার চিড়িয়াখানায় এমুপাখির ডিম ফুটে ছানা হয়েছে। শুধু তাই নয়। কালিজ ফিজেন্ট, গোল্ডেন ফিজেন্ট, সিলভার ফিজেন্ট পাখিরা ডিমে তা দেওয়াও শুরু করেছে।

Advertisement

বন দফতরের আধিকারিকেরা মানছেন, প্রাকৃতিক শাল জঙ্গলের মধ্যে চিড়িয়াখানাটি থাকলেও এতদিন লোকজনের কোলাহলে কার্যত নিভৃত যাপনের সুযোগ পেত না বন্যপ্রাণীরা। ফলে, স্বাভাবিক প্রজনন ব্যাহত হত। কিন্তু করোনাভাইরাসের শঙ্কায় গত ১৭ মার্চ থেকে চিড়িয়াখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। ফলে ২৩ হেক্টর এলাকা জুড়ে এই চিড়িয়াখানায় নিজেদের মতো করে সময় কাটাচ্ছে বন্যপ্রাণী, পাখি ও সরীসৃপেরা।

২০১৭ সালের অক্টোবরে উত্তরবঙ্গের খয়েরবাড়ি চিতাবাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে আনা হয় ‘সোহেল’ নামে একটি পুরুষ চিতাবাঘকে। প্রায় দু’বছর পরে সোহেলের নিঃসঙ্গ জীবনযাপনে দাঁড়ি পড়ে গত সেপ্টেম্বরে। খয়েরবাড়ি থেকে আনা হয় ‘হর্ষিণী’ নামে স্ত্রী চিতাবাঘকে। কিন্তু হর্ষিণীর মেজাজ ও দাপটে ত্রস্ত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাকে আলাদা রাখার সিদ্ধান্ত নেন। দু’জনকে পাশাপাশি আলাদা এনক্লোজারে পরীক্ষামূলক ভাবে রাখা হয়। মাস তিনেক পরে হর্ষিণী শান্ত হয়। গত ডিসেম্বরে সোহেলের এনক্লোজারে ছাড়া হয় তাকে। ক্রমে দু’জনের মধ্যে ভাব হয়ে যায়।

Advertisement

লকডাউনে চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকলেও বন্যপ্রাণীদের নিয়মিত পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকেরা। হর্ষিণীকে দেখে তাঁরা বুঝতে পারেন, সে অন্তঃসত্ত্বা। তাকে আলাদা এনক্লোজারে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। উপযুক্ত খাবার ও ভিটামিন দেওয়া হচ্ছে। প্রসবের পরে সোহেল যাতে নবজাতক শাবকের ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্যই এমন ব্যবস্থা।

চিড়িয়াখানার এনক্লোজারে বছর সাতেক ধরে রয়েছে গোটা সাতেক এমু পাখি। ডিম পাড়লেও এত বছরে কখনও স্ত্রী এমুদের ডিমে তা দিতে দেখা যায়নি। এই প্রথম একটি স্ত্রী এমু ডিমে তা দেওয়া শুরু করে। দিন কয়েক আগে ডিম ফুটে পাঁচটি এমু ছানা হয়েছে। চিড়িয়াখানার আবাসিক গোল্ডেন ফিজেন্ট, সিলভার ফিজেন্ট ও কালিজ ফিজেন্ট পাখিরাও ডিমে তা দিচ্ছে—যা আগে কখনও হয়নি বলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)-এর তালিকা অনুয়ায়ী কালিজ ফেজেন্ট ও সিলভার ফেজেন্ট সঙ্কটাপন্ন।

ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হলেইচ্চি মানছেন, ‘‘স্ত্রী চিতাবাঘটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। এমুপাখির ছানাও হয়েছে।’’ চিড়িয়াখানার প্রাণী চিকিৎসক চঞ্চল দত্ত বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন মানুষের ভিড় না থাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী ও পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। চিড়িয়াখানার আবাসিকদের বংশবৃদ্ধি শুরু হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement